ব্যক্তিগত ‘SWOT’ অ্যানালাইসিস : নিজেকে আবিষ্কার করুন নতুনভাবে

সফলতা এবং ব্যর্থতা— এ দুয়ের মাঝেই আমাদের বেঁচে থাকা। ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিক জীবনে সবাই চায় সফল হতে, ব্যর্থ হতে কেউই চায় না। অথচ আমরা সফল হবো নাকি বিফল তার বেশিরভাগটাই নির্ভর করে আমাদের ইচ্ছা, ত্যাগ, সামর্থ্য, যোগ্যতা, পরিশ্রম ইত্যাদির ওপর। তাই এই প্রতিযোগিতামূলক পৃথিবীতে আগে থেকেই নিজের অবস্থানটা স্পষ্ট করে জানা খুবই প্রয়োজন।

আর ‘SWOT’ অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে আপনি আপনার অবস্থান সম্পর্কে একটা ধারণা লাভ করতে পারবেন এবং সেই অনুযায়ী আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো সময়মতো নিতে পারবেন। শুধু ব্যক্তিগত উন্নয়নে এর ব্যবহার তা নয় কিন্তু, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রেও বর্তমান ও সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা করতে ‘SWOT’ অ্যানালাইসিস একটি বহুল জনপ্রিয় পদ্ধতি।

SWOT শব্দটি ইংরেজি Strength (শক্তি), Weakness (দুর্বলতা), Opportunities (সুযোগ), Threats (হুমকি) শব্দগুলোর প্রথম অক্ষর নিয়ে গঠিত। ১৯৬০ সালে এডমন্ড পি. লার্নড, কেনেথ অ্যান্ড্রুজ, সি. রোলান্ড ক্রিস্টেন্সেন এবং উইলিয়াম ডি. এই চারজন ব্যক্তি এই অ্যানালাইসিসের ব্যাপারে ধারণা দেন।

প্রতিটি মানুষেরই কিছু বিশেষ গুণ বা সামর্থ্য থাকে যেসব ক্ষেত্রে সাধারণত তার রয়েছে বিপুল উৎসাহ। এসব ইতিবাচক দিকসমূহ ওই মানুষের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য বিশাল সুযোগ সৃষ্টি করে। আবার নিশ্চয়ই কিছু দুর্বল দিকও থাকে। যা তার সফল হওয়ার জন্য হুমকিস্বরূপ।

আপনি কি জানেন আপনার শক্তিগুলো কী কী এবং সেগুলো কোথায় ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে? আপনি কি আপনার দুর্বল দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন যা কি-না আপনার ক্যারিয়ার কিংবা ব্যক্তিগত জীবন বিষিয়ে তুলতে পারে?

চলুন আজ সেটাই জানবো SWOT অ্যানালাইস করে। এর জন্য নিচের ছবির মতো একটা ছক তৈরি করে নিতে হবে। তবে গুরুত্বের সাথে খেয়াল রাখতে হবে যেন এই ছকে তথ্য ব্যবহারে ক্ষেত্রে আপনি যথেষ্ট নিষ্ঠাবান আছেন। নিজের শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য যেমন তুলে ধরতে হবে তেমনি নিজের দুর্বলতা নিয়ে চিন্তা করতে দ্বিধাজড়িত হওয়া যাবে না।SWOT Analysis

Strength বা শক্তিশালী বৈশিষ্ট্য

নিজের ভালো দিকগুলো সম্পর্কে আমরা সবাই কম-বেশি জানি। কিন্তু এ সম্পর্কে ব্যাপকভাবে জানি না। তাই প্রথমে ভালো দিকগুলো নির্দিষ্টভাবে বাছাই করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সময় নিয়ে বাছাই করতে হবে ওইসব কাজ যেসবে আপনার উৎসাহ ও আগ্রহ আছে এবং একই সাথে দক্ষতাও আছে।

কারণ অনেক কাজে উৎসাহ থাকলেও যদি কখনওই দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব না হয়, তাহলে তা সম্ভাবনাময় দিক হতে পারে না। আপনার সম্ভাবনাময় দিকগুলো কী কী? তা হতে পারে গান গাওয়া, লেখালেখি করা, ছবি আঁকা, ইংরেজি ভাষায় পারদর্শিতা, লিডারশিপ দক্ষতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, যোগাযোগ-দক্ষতা অথবা নতুন বিষয়ে চিন্তা যা এখনও আসে নি অথচ সামনে এর বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে ইত্যাদি। বিভিন্নজনের আলাদা আলাদা ভালো বৈশিষ্ট্য  থাকবে। আপনারও নিশ্চয়ই একাধিক ভালো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এভাবে আপনার Strength-গুলো Strength-এর ঘরে তালিকাবদ্ধ করবেন।

Weakness বা দুর্বল দিক

নিজের শক্তিশালী দিকগুলোতো বের করলেন। এবার দুর্বল দিকসমূহ বা আপনার অদক্ষতাও বের করতে হবে। দুর্বল দিক (Weak Point) খুঁজতে হলে আপনাকে আরও সৎ হতে হবে। কেননা মানুষ নিজের দুর্বলতা নিয়ে ভাবতে পছন্দ করে না। ফলে নিজেদের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবগত থাকে না। উপরন্তু নিজের ভুল সঠিক বলে চালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। কোন কোন কাজ আপনি এড়িয়ে চলেন বা ভয় পান? সেগুলো খুঁজে বের করতে হবে। এছাড়া আত্মবিশ্বাসের অভাব, যোগাযোগের অদক্ষতা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার অক্ষমতা, কম্পিউটারে অপারদর্শিতা, সংযমের অভাব, সময়ের অবমূল্যায়ন, যুগের সাথে চলতে না পারা এমনি শারীরিক অসুস্থতাও আপনার দুর্বল দিক হতে পারে। আপনি আপনার নেতিবাচক দিক বের করে Weakness-এর ঘরে লিখবেন। 

এপর্যন্ত অ্যানালাইসিসের অর্ধেক সম্পন্ন হলো। Strength ও Weakness  ভেতরের দিক। অর্থাৎ আপনার ভেতরকার অবস্থা তুলে ধরে। 

Opportunities  বা সুযোগ: সুযোগ বলতে বুঝায় কোনকিছু যখন আপনার অনুকূলে থাকে। আপনার শক্তি আপনার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে। ধরুন কারো লেখালেখির দক্ষতা আছে। ফলে তার জন্য লেখালেখি করার বিশাল সুযোগ রয়েছে। সে সংবাদপত্র, ব্লগ, ম্যাগাজিন ইত্যাদি বিভিন্ন ক্ষেত্রে লিখতে পারবে। আবার কারো লিডারশীপ দক্ষতা থাকলে হয়ত কোনো গ্রুপের মেন্টর হওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। আপনার Strength-এর ভিত্তিতে কোন কোন ক্ষেত্রে কি কি সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে তার একটা তালিকা তৈরি করেন। ফলে আগে থেকেই আপনার একটা পরিষ্কার ধারণা থাকবে। তাই যখন কোনো সুযোগ আসবে তখন দ্রুত তার সদ্বব্যবহার করতে পারবেন।

Threats বা হুমকিসমূহ

Strength যেমন সফল হওয়ার সুযোগ করে দেয়, তেমনি Weakness আপনার ক্যারিয়ার কিংবা ব্যক্তিগত জীবনে ব্যাঘাত ঘটাতে হুমকিরূপে দেখা দেয়। আপনার দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করার পর সেগুলো আপনার জীবনে কি প্রভাব ফেলতে পারে তার একটি রূপরেখা তৈরি করতে হবে। ফলে দুর্বল দিকগুলো হুমকিস্বরূপ হওয়ার আগেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। এতে আপনি ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পারবেন বা অনেকাংশে কমাতে পারবেন। 

Opportunities ও Threats-কে এই প্রজেক্টের বাহ্যিক দিক ধরা হয়। কারণ এর প্রায়োগিক ক্ষেত্র রয়েছে। 

এবার ছকে তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে আপনি আপনার শক্তিশালী দিক ও দুর্বল দিকগুলো সম্পর্কে জেনে; সুযোগ ও সম্ভাব্য হুমকিসমূহের ব্যাপারে সচেতন থাকতে পারবেন। বস্তুত নিজের অবস্থান সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকলে আপনি অন্য যে কারো থেকে একধাপ এগিয়ে থাকবেন। কর্পোরেট যুগে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই আপনাকে নিজের সেরাটা বের করে আনতে হবে। এক্ষেত্রে  SWOT অ্যানালাইসিস হতে পরে সবচেয়ে ভালো উপায়। তাই দেরি না করে আজই করে ফেলুন আপনার ব্যক্তিগত অ্যানালাইসিস। 

আমার আরও লেখা পড়তে পারেন এখানে

থ্রিডি প্রিন্টিং : প্রযুক্তি দুনিয়ার এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন

Source links:

Pronab

জীবন কেবল প্রতিযোগিতার জন্য না মানব জীবন বৃক্ষের পরিপক্ব ফল স্বরূপ যা মহান মানবতার জন্য উৎসর্গিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *