Nokia এর বেড়ে ওঠা ও সময়ের সাথে হারিয়ে যাওয়া

“NOKIA” কি চিনতে পারছেন তো. না চিনার কি আছে. Nokia এমন একটি ব্র্যান্ড যার নাম বুড়ো থেকে শিশু পর্যন্ত প্রায় সবাই চিনে. আপনার দাদার বা আপনার বাবার প্রথম ফোন ছিল Nokia. হয়তো আপনাদের কারো প্রথম ফোন কিন্তু Nokia ই ছিল. যাইহোক Nokia তাদের বার ফোন বা বাটন ফোনের জন্য বিখ্যাত. তবে Nokia এর কিছু স্মার্ট ফোন রয়েছে. কিন্তু এখন Nokia মোবাইল ফোন আর প্রস্তুত করছে না. তবে এরা এখন মোবাইল নেটওয়ার্ক ও তার পিছনের অবকাঠামো নিয়ে কাজ করছে. Nokia এর সাবেক এক্সিকিউটিভ রা এইচএমডি গ্লোবাল নামের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছে. যাই হোক আমরা এবার Nokia এর গোড়ার কথা বলি. “NOKIA” এটা একটি ফিনিশ কোম্পানি. যদিও ফিনল্যান্ডের একটি শহর এর নাম NOKIA. Nokia এর প্রতিষ্ঠাতা ছিল “FREDRICK IDESTINE”. 1865 সালে কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে. ভাবতে অবাক লাগে যে দেড়শ বছর আগে যে সময় সেল ফোন আবিষ্কার হয়নি সে সময়ে Nokia কিভাবে ফোন তৈরি করল. কিন্তু তা নয়, Nokia প্রথম ব্যবসা শুরু করে পেপার দিয়ে এরপর রাবার ব্যবসা করে. রাবার গুলো এখন Nokian টায়ার এবং পেপারগুলো Essity নামে পরিচিত.Nokia ষাটের দশকে তাদের ব্যবসা ক্যাবল ব্যবসায় পরিবর্তন করেন. 1981 সালে Nokia তাদের প্রথম ফোন বাজারে আনে যার নাম ছিল Nokia mobira senator. যেহেতু Nokia এর ফোন গুলো বেশি বিক্রি হতো এবং লাভ কম ছিল তাই তারা অন্য সব প্রোজেক্ট এর দিকে লক্ষ কম দিয়ে Nokia ফোন গুলোর জন্য রিসার্চ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট এ প্রচুর অর্থ ব্যয় করে. 1991 থেকে 1995 এই সময়কালে আমরা যদি Nokia এর আয়ের দিকে তাকাই তবে দেখা যাবে যে 1991 থেকে 1995 এর মধ্যে Nokia এর বিক্রি দ্বিগুণ বেড়ে যায়. লাভ বেড়ে দাঁড়ায় 10 গুনে. 1998 সালের Nokia বিশ্বের বেস্ট সেলিং ফোন ব্র্যান্ড হিসেবে খেতাব লাভ করে. 2004 সালে Nokia এর মোট আয় ছিল 29.37 মিলিয়ন ইউরো. 2006 এ Nokia এর আয় 41.12 এবং Apple এর ছিল 19.3 বিলিয়ন. তারমানে Apple তখনও Nokia টপকাতে পারেনি. ওয়ার্ল্ডের টপ সেলিং মোবাইল ফোনের মধ্যে নাম্বার ওয়ান এ Nokia. তাহলে দুই নম্বর এ কে, হ্যাঁ 2 নম্বরেও নোকিয়া. টপ টেন এর মধ্যে আটটি ছিল Nokia এর ফোন. বাকি 2 টি ছিল একটি Apple এবং একটিস্যামসুং এর. আর্থিকভাবে Nokia এর সেরা বছর ছিল 2007.তখন Nokia এর আয় ছিল 51.06 বিলিয়ন ইউরো. আর Apple তখনও 37.5 বিলিয়ন ইউরো নিয়েই বসে ছিল. কিন্তু 2008 সালের পর থেকে Nokia এর ব্যবসায় ধ্বস শুরু হয়. 2009 এ Nokia এর আয় ছিল 40.98 আর সেই একই অর্থবছরে Apple এর আয় ছিল 42.98, তারমানে মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে Apple, Nokia কে টপকে উপরে উঠে বসেছে. এইদিকে Samsung ও ক্রেতাদের পছন্দের জায়গা কেড়ে নিতে সক্ষম হয়. ওই সময়ের পরে Samsung মার্কেটে প্রথম স্থান অর্জন করে, দ্বিতীয়তে ছিল Apple এবং তৃতীয় তে Nokia. Nokia এর মার্কেট শেয়ার: যদি আমরা আর্থিক দিক থেকে চিন্তা করি তাহলে Nokia এর সেরা বছর 2007 আর এমনিতে Nokia এর সেরা বছর 2008. ওই বছর Nokia এর মার্কেট শেয়ার ছিল 43.7 শতাংশ কিন্তু 2007 সালে 49.4 শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে Nokia তাদের ব্যবসা চালাচ্ছিল. যেই মার্কেট শেয়ার 2009 এবং 2010 পর্যায়ক্রমে 41.1শতাংশ এবং 38.2 শতাংশ কমে যায়. ওই বছরের প্রথমার্ধে Nokia এর মার্কেট শেয়ারে সর্বোচ্চ ধ্বস নামে যা কিনা 3 শতাংশে নেমে যায়. আবার 2020 এ স্যামসাং এবং Apple র মার্কেট শেয়ার যথাক্রমে 30.36 শতাংশ এবং 28.19 শতাংশ. এখান থেকেই বুঝা যাচ্ছে যে এখনকার বাজারে স্যামসাংয়ের মার্কেট শেয়ার এর দিক থেকে নকিয়া এর মার্কেট শেয়ার ওই সময়ে অনেক বেশি ছিল.

Nokiaএর পিছিয়ে পড়ার কারণ:

যে ফোন দিয়ে Nokia মার্কেট এ আধিপত্য বিস্তার করতো তাদের কোন টি স্মার্টফোন ছিলনা. আবার সময়ের সাথে সাথে Samsung ও Apple বাজারে স্মার্টফোন নিয়ে আসে. প্রথমদিকে অ্যান্ড্রয়েড ফোন গুলোর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি ছিল. যেহেতু Nokia এর উৎপাদন খরচ কম এবং বিক্রি বেশি হওয়ায় লাভ ছিল ব্যাপক তাই স্মার্ট ফোন নিয়ে তাদের দূরদর্শী কোনো পরিকল্পনা ছিল না. সমস্যার শুরু হয় এই পরিকল্পনার অভাব থেকে. সর্বপ্রথম যখন স্মার্টফোন বের হয়েছিল তখন ওইগুলো শুধু ব্যবসার উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতো. Nokia পরে বাজারে স্মার্টফোন নিয়ে আসে কিন্তু সেই বছর 2007 এ Apple তাদের প্রথম মোবাইল ফোন নিয়ে আসে. তখনো স্মার্টফোন বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছিল Nokia. 2007 এ সব বিক্রিত ফোনের 5 শতাংশ ছিল Apple এর বাকি 50 শতাংশ ছিল Nokia এর. এতে করে Nokia তাদের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল.I-phone ওয়ান এর পরে যে ফোনগুলো I-phone বের করে সেই গুলোর অপারেটিং সিস্টেম ছিল খুবই ভালো. Nokia তাদের সফটওয়্যার এর চেয়ে হার্ডওয়ারের দিকে বেশি নজর ছিল. তাই এদের ফোনগুলো ছিল খুবই শক্ত. I-phone তাদের অপারেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের এক নতুন দিগন্ত দেখাচ্ছিলো. আবার ওই সময়েও Nokia সিম্বিয়ান [Symbian] অপারেটিং সিস্টেম ইউজ করেছিল. সিমবিয়ান অপারেটিং সিস্টেমের জন্য অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট করা খুবই কষ্টসাধ্য ছিল. যার কারনে ফোনগুলো ছিল বেশ বাগি. Nokia ভালো ফোন থাকলেও ভালো অপারেটিং সিস্টেম ছিল না যার কারণে ক্রেতারা অন্য ব্র্যান্ডে শিফট করতে বাধ্য হয়. Nokia পরবর্তীতে চিন্তা করে তারা সিমবিয়ান অপারেটিং সিস্টেম থেকে মাইক্রোসফ্ট এর অপারেটিং সিস্টেম চালু করবে.সেই বছরই Nokia লুমিয়া নামে মাইক্রোসফটের অপারেটিং সিস্টেম সমন্বিত একটি ফোন বাজারে আনে. 2014 সালে মাইক্রোসফ্ট সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা Nokia উইন্ডোজ সেক্টরটি কিনে নিবে. 7.2 বিলিয়ন দিয়ে Nokia থেকে লুমিয়ার মালিকানা মাইক্রোসফট কিনে নেয়. যেটা ছিল microsoft-এর কাছে একটা বড় অভিশাপের মতো. পরে সাড়ে 300 মিলিয়ন ডলারে এইচএমডি গ্লোবালের কাছে মাইক্রোসফ্ট এটি বিক্রি করে দেয়. Nokia বর্তমানে আবার ফিরে আসার চেষ্টা করলেও বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে. এর মাঝেই অনেক স্মার্টফোন বাজারে নতুন করে আসতে শুরু করছে. বর্তমানে Nokia মার্কেট শেয়ার 1 শতাংশ.
Aa
 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *