সফট স্কিল কি: পেশাগত জীবনে সফট স্কিলের প্রয়োজনীয়তা

শুরুতেই জেনে নেওয়া যাক সফট স্কিল কি অথবা সফট স্কিল বলতে কি বোঝায়? পুরো বিষয়টি কিভাবে কাজ করে তা বোঝার জন্য এ বিষয়ে পুরোপুরি ধারনা থাকতে হবে।

সফট স্কিল হচ্ছে এমন কিছু চারিত্রিক বা ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য যা অন্য মানুষের সাথে ভালোভাবে কাজ করতে, সম্পর্ক তৈরি করতে, দলগতভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।

সফট স্কিল কি বা কাকে বলে এইটা ভালোভাবে বুঝতে হলে হার্ড স্কিল এবং সফট স্কিল এর মধ্যে পার্থক্য জানতে হবে,আমি যদি একটি উদাহরণ এর মাধ্যমে বলতে চাই, হার্ড স্কিল হচ্ছে আপনার পেশাগত দক্ষতা যেটি আপনি পরিমাপ করতে পারবেন। যেমন, আমি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র আমার অটো ক্যাড জানাটা হচ্ছে আমার হার্ড স্কিল।

কিন্তু সফট স্কিল হচ্ছে আমি অটো ক্যাড কত ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারি, কাজটি কত সৃজনশীল ভাবে করতে পারি, কাজটি কত সহজে করতে পারি, কাজটি করতে  কোন সমস্যায় পরলে তা কত সহজে সমাধার করতে পারি, কাজটি করতে গিয়ে কতটুকু মানসিক চাপ নিতে পারি, আমি কাজটিকে আরো সহজে কিভাবে করতে পারি,কাজটি কত সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পারি এগুলো হচ্ছে আমার সফট স্কিল। আশা করছি এখন সফট স্কিল আর হার্ড স্কিল এর মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পেরেছেন

কোন কোন সফট স্কিল্গুলো জানা জরুরি? 

  • কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা
  • দলগত ভাবে কাজ করার দক্ষতা
  • লিডারশীপ বা নেতৃত্বদানের ক্ষমতা
  • সৃজনশীলতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা
  • মানসিক চাপ নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা
  • ক্রিটিকাল থিঙ্কিং
  • ইতিবাচক মনোভাব বা নিজে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা ইত্যাদি 

 

কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা-

কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা প্রতিটি ক্ষেত্রেই খুব প্রয়োজন। ব্যক্তিগত জীবনে এবং পেশাগত জিবনে যোগাযোগ দক্ষতা আপনার লাগবেই। পেশাগত জীবনে ,সামাজিক জীবনে হোক পারিবারিক জীবন সবজায়গাতেই আপনাকে বিভিন্ন ব্যক্তি,ক্লায়েন্ট,পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলতে হবে ,সুতরাং আপনি কিভাবে কথা বলছেন,আপনার বডি ল্যংঙ্গু্যেজ কি,আপনি যা বুখাতে চাইছেন তা বুঝাতে পারছেন কিনা এই বিষয়গুলি খেয়াল রাখতে হবে। সাধারণত দুই ধরনের যোগাযোগ করতে হয় ,মৌখিক ও লিখিত । আপনার দুই ধরনের যোগাযোগ দক্ষতা থাকা চাই। এখন এসএমএস ও ইমেইল এর মাধ্যমেও যোগাযোগ করতে হয়ে থাকে।

দলগতভাবে কাজ করার দক্ষতা-

দলের সঙ্গে মিলেমিশে, সঠিকভাবে কাজ করার মানসিকতা ও সক্ষমতা থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ । দলগত কাজ করতে গিয়ে কোন সমস্যায় পরলে তার সমাধান করতে পারা সেক্ষেত্রে আপনার দলের সবার মতামত শোনা এবং নিজের মতামত সবার কাছে ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারা। টিম ওয়ার্ক বা দলগত কাজের ক্ষেত্রে কিছু গুন আপনার থাকা দরকার, যেমন- অপরের মতামত গ্রহণ করার ক্ষমতা, অপরের প্রতি সহানুভূতি থাকা, সহযোগী মনোভাব, ধর্ম ,বর্ণ বিভাযন না করতে পারার ক্ষমতা ইত্যাদি।

লিডারশীপ বা নেতৃত্বদানের ক্ষমতা-

নেতৃত্বদানের ক্ষমতা থাকাটা অলিখিত সংবিধান এর মত। আপনাকে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা অর্জন করতেই হবে, কেননা পেশাগত জিবনে নেতৃত্বদানের ক্ষমতা থাকাটা অপরিহার্য। আমি যদি একটি উদাহরনের মাধ্যমে বলি তাহলে, মনে করেন আপনি একটি প্রজেক্টের প্রজেক্ট ম্যনেজার,অথচ আপনি আপনার নিচে যারা কাজ করছে,তাদেরকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিতে পারছেন না,অথবা তাদেরকে আপনি ভালোভাবে বুঝাতে পারছেন না, এমতবস্থায় আপনার প্রমোশন তো দূরের কথা আপনি আপনার বর্তমান অবস্থানটাই ধরে রাখতে পারবেন না। সুতরাং এজন্য আপনাকে অবশ্যই লিডারশীপ বা নেতৃত্বদানের ক্ষমতা-অর্জন করতে হবে।

সৃজনশীলতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা-

সৃজনশীলতা ও সমস্যা সমাধানের দক্ষতা থাকাটাও জরুরি। ধরেন আপনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একজন ছাত্র, আপনি বাড়ির ডিজাইন সাধারনত অটোক্যড ৭ এ করে থাকেন কিন্তু একদিন আপনার বস আপনবাকে তার কম্পিউটারে একটি বাড়ির ডিজাইন করতে বলল, দুভাগ্যক্রমে উনার কম্পিউটারে অটোক্যড ২১ ইন্সটল করা কিন্তু আপনি অটোক্যড ২১ দিয়ে কখনো ডিজাইন করেন নাই বা পারেন না সেক্ষেত্রে আপনাকে লজ্জিত হতে হবে আর শুধুমাত্র একারনেই আপনাকে সৃজনশীল এবং সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জন করতে হবে।

মানসিক চাপ নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা-

আপনি যেখানেই কাজ করেন না কেন বা যে কাজ ই করেন না কেন , কাজের মধ্যে চাপ থাকবেই। এই চাপের মধ্যে আপনাকে কাজ করতেই হবে কেননা কর্মই জীবন। এই চাপের মধ্যে কোন কাজটি আগে করতে হবে,কোন কাজটি পরে এসব বিষয়ে ধারনা থাকাটা ভালো এক্ষেত্রে অন্যের পরামর্শ নিতে পারেন। তাই কিভাবে কাজকে সহজ করে নেওয়া যায়, কিভাবে চাপের মুখেও সুন্দরভাবে কাজ করা যায় সেই ক্ষমতা থাকা দরকার। সুতরাং মানসিক চাপ নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা আপনার থাকতেই হবে।

ক্রিটিকাল থিঙ্কিং-

ক্রিটিকাল থিঙ্কিং গুন আপনার থাকলেই তবেই আপনি সফল হতে পারবেন। ধনের আপনি একটি কাজ করতে গিয়ে একটা সমস্যায় পরলেন, এখন যদি আপনি সমস্যা সমাধন না করে কাজটাই বাদ দিয়ে দেন,তাহলে বিষয়টি কি হবে ভেবে দেখেছেন? আপনি কাজকে বাদ না দিয়ে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায় সেজন্য আপনাকে চিন্তা করতে হবে শুধু চিন্তা নয় আপনাকে গতানুগতিক ধারার বাহিরে গিয়েও চিন্তা করতে হবে,তবেই সমস্যা সমাধানের পথ খুজে পাবেন, সফল অর্জন করতে পারবেন। তাই ক্রিটিকাল থিঙ্কিং গুন বা দক্ষতা থাকাটা তততাই দরকার।

ইতিবাচক মনোভাব বা নিজে খাপ খাওয়ানোর ক্ষমতা-

ইতিবাচক মনোভাব হচ্ছে এমন, ধরেন আপনি আপনার অফিসে ১০ মিনিট পরে গেলেন আর আপনি আপনার সিটে বসার আগেই আপনার বস ৫ টাকার হুইল পাউডার দিয়া ধুয়ে দিল, যাক নিজেকে কোন রকম মানিয়ে নিয়ে আপনার সিটের দিকে যাচ্ছেন সিটে বসতে না বসতেই আপনার একজন জুনিয়র এসে বলল ভাইয়া চলেন না আজকে অফিস শেষে সিনেমা দেখতে যাই। তখন নিশ্চই আপনার মনে হবে যেন কান দুইটা রক্তজবার মত লাল করে দেই। কিন্তু আপনি যদি এই কাজটি না করে বলেন ঠিক আছে ভাইয়া আজকে টিকেটের মুল্যটা কিন্তু আমি দিব, তবে এটাই হচ্ছে ইতিবাচক মনোভাব। সুতরাং ইতিবাচক গুনটাও আপনার থাকা চাই।

 

পেশাগত জীবনে সফট স্কিলের প্রয়োজনীয়তা!

এবার আসা যাক পেশাগত জীবনে সফট স্কিলের প্রয়োজনীয়তা কেন? উপরে যতগুলু সফট স্কিল এর কথা বলা হয়েছে সবগুলোই আপনার পেশাগত জিবনে লাগবেই লাগবে। পেশাগত জীবনে আপনার যোগাযোগ করতে হবে, দলগতভাবে কাজ করতে হবে, নেতৃত্ব দিতে হবে আবার সমস্যার সমাধানও করতে হবে সেই সাথে মানসিক চাপ, চিন্তা করা এবং ইতিবাচক মনোভাব বা সব পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া বা খাপ খাইয়ে নিতে হবে।সুতরাং সফট স্কিলই সবেচেয়ে বেশি প্রয়োজন আপনার পেশাগত জীবনে।

কপিরাইটঃ Ariyan Nazmul

আমার আরো লেখাসমুহ-

বাড়িতেই আইএলটিএস এর প্রস্তুতি কিভাবে নিবেন

আত্মউন্নয়নের জন্য নিজেকে সময় দিন

জার্মানিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা

 

Nazmul Hasan

Assalamu Alaikum. This is Nazmul Hasan. I am from Bangladesh. I am Civil Engineering Student. I love to share information about higher studies and immigrants. Because many students fail to fulfill their dream of higher education only due to a lack of information

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *