শুভ্র মেঘের দেশ নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা

নিউজিল্যান্ড বা আওটেয়ারোয়া। ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন সিলভার ফার্ণের এই দেশটি পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর আগে পলিনেশিয়ান বিভিন্ন ক্ষুদ্র-জাতিগোষ্টি তাসমান সাগরের কোল জুড়ে থাকা এই দেশটিকে আবিষ্কার করে। ছোট ছোট সেসব জাতিগোষ্টি একটা সময় সেখানে স্বতন্ত্র মাওরি (Maori) সংস্কৃতি গড়ে তোলে, যারাই নিউজিল্যান্ডিয় আদিবাসী হিসেবে পরিচিত।

১৬৪২ সালে সর্বপ্রথম ইউরোপিয়ান অভিযাত্রী হিসেবে ‘আবেল তাসমান’ এখানে নোঙর ফেলেন। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে সেখানে শ্বেতাঙ্গদ্যের আধিক্য দেখা দেয়। ১৮৪০ সালে ব্রিটিশরা স্থানীয় মাওরিদের সাথে একটি চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী ১৮৪১ সাল থেকে নিউজিল্যান্ড একটি ব্রিটিশ কলোনির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৩০ এর দশকে এক সাংস্কৃতিক বিপ্লবের (কালচারাল রেনেসাঁ) পর থেকে দেশটির রাজনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়। এরপর থেকে বর্তমান অবধি এখনো নিউজিল্যান্ডিয়ান রাজনীতি কল্যাণমুখী এবং উদারনীতি গ্রহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে। তবে উল্লেখ্য হলো, আজও দেশটির রাষ্ট্র প্রধান গ্রেট ব্রিটেইনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, যদিও দেশটির রাজনীতিতে রাণীর কোনো প্রভাব নেই।

দীর্ঘ শুভ্র মেঘের দেশ বা নিউজিল্যান্ডে আজও বেঁচে আছে ঐতিহ্যবাহী মাওরি সংস্কৃতি। কিন্তু সেটা এখন আধুনিক নিউজিল্যান্ডের ইউরোপিয়ান সংস্কৃতির সাথে মিশে গেছে।

তবে আজও নিউজিল্যন্ডে বাঁশির সুরে তাল মিলিয়ে বাজানো হয়ে থাকে ঐতিহ্যবাহী মাওরি সঙ্গীত, টিকে আছে ঐতিহ্যবাহী মাওরি নৃত্যও! কাঠে খোদাই শিল্প, চিত্রশিল্প, শনের বুননে তৈরি হস্তশিল্প বা কারু শিল্পের মাওরি সংস্কৃতির দেশটি বর্তমানে বিশ্বের লাখ লাখ মানুষের অন্যতম প্রধান গন্তব্য স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর প্রায় কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী এখানে ছুটে আসে প্রকৃতির মায়া, সৌন্দর্যের লুকোচুরিতে হারিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে। চলুন আজ জেনে নেই প্রকৃতি প্রেমী ছাত্র-ছাত্রীদের অন্যতম প্রধান গন্তব্য, নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে।

কেনো পড়বেন নিউজিল্যান্ডে?

পাহাড়-পর্বতে ঘেরা এই দেশটি ভৌগলিকভাবে বিচ্ছিন্ন হলেও, অর্থনৈতিকভাবে অন্যতম এক ধনী রাষ্ট্র। এখানের মানুষের গড় মাথাপিছু জিডিপি $৩১,০৬৭ ডলার। দেশটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কও অনেক শিথিল। কেননা, নিউজিল্যান্ডের পাসপোর্ট দিয়ে বিশ্বের ১১২টি দেশে বিনা ভিসায় ভ্রমণ করা যায়, যা বৈশ্বিক পাসপোর্ট সূচকে ৬ঠ স্থানে রয়েছে। আর মূল কথা হলো, এখানের রাজনীতিতে উদারনীতি থাকায়, খুব সহজেই স্থায়ী নাগরিকত্ব লাভ করা যায়।

তাছাড়া শিক্ষা মান আর বিভিন্ন সূচক হিসেবে নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অতুলনীয়। উভয়, QS Ranking এবং Times Higher Ranking মতে নিউজিল্যান্ডের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ই বিশ্বের প্রথম ৫০০ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভূক্ত। উচ্চশিক্ষা পরবর্তী চাকুরির ক্ষেত্রেও নিউজিল্যান্ডের বাজার অত্যন্ত ঈর্ষনীয়। শতাংশের হিসেবে প্রায় ৯৩% ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা শেষ করে সরাসরি চাকুরিতে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়ে থাকে। যা নিউজিল্যান্ডকে উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হিসেবে অন্যতম দেশ হিসেবে আলাদা করে রাখে।

কি কি বিষয়ে পড়া যায়?

নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার ধরণ অনেকটাই ইউরোপীয় ধাঁচের। এখানে নিচের স্তর ভেদে উচ্চশিক্ষায় পড়াশোনা করা যায়;

এসব স্তরগুলোতে নিচের বিষয়গুলি পড়া যায়,

কি কি যোগ্যতা লাগে?

ডিগ্রি ভেদে যোগ্যতা কোথায় কি লাগবে, তা হলো – 

PhD/Doctoral ডিগ্রির জন্য –

  • ২ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা
  • মাস্টার্স ডিগ্রি সনদ (থিসিস সহ)
  • ব্যাচেলর্স ডিগ্রি সনদ (থিসিস সহ)
  • গবেষণা পত্র
  • উচ্চ মাধ্যমিক সনদ
  • মাধ্যমিক সনদ
  • IELTS Band Score কমপক্ষে 6.5
  • রেকমেন্ডেশন লেটার
  • SOP বা Statement of Purpose (যেখানে অবশ্যই Extra-Curricular কাজগুলির উল্লেখ থাকতে হবে)
  • CV বা Resume (কোনো নির্দিষ্ট ফর্মেটের প্রয়োজন নেই)

মাস্টার্স ডিগ্রির জন্য –

  • ব্যাচেলর্স ডিগ্রি সনদ (থিসিস সহ)
  • গবেষণা পত্র (যদি থাকে)
  • উচ্চ মাধ্যমিক সনদ
  • মাধ্যমিক সনদ
  • IELTS Band Score কমপক্ষে 6.0 
  • রেকমেন্ডেশন লেটার
  • SOP বা Statement of Purpose (যেখানে অবশ্যই Extra-Curricular কাজগুলির উল্লেখ থাকতে হবে)
  • CV বা Resume (কোনো নির্দিষ্ট ফর্মেটের প্রয়োজন নেই)

ব্যাচেলর্স ডিগ্রির জন্য –

  • উচ্চ মাধ্যমিক সনদ
  • মাধ্যমিক সনদ
  • IELTS Band Score কমপক্ষে 5.5
  • রেকমেন্ডেশন লেটার
  • SOP বা Statement of Purpose (কেনো পড়তে যাচ্ছি এবং কেনো ঐ বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ করেছি, সেটা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে)
  • CV বা Resume (কোনো নির্দিষ্ট ফর্মেটের প্রয়োজন নেই)

ফাউন্ডেশন কোর্সের জন্য –

  • উচ্চ মাধ্যমিক সনদ
  • মাধ্যমিক সনদ
  • IELTS Band Score কমপক্ষে 5.5
  • রেকমেন্ডেশন লেটার
  • SOP বা Statement of Purpose (কেনো পড়তে যাচ্ছি এবং কেনো ঐ কোর্স পছন্দ করেছি, সেটা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে)
  • CV বা Resume (কোনো নির্দিষ্ট ফর্মেটের প্রয়োজন নেই
কি কি স্কলারশিপ নিয়ে নিউজিল্যান্ডে পড়া যায়?

নিউজিল্যান্ড সরকার প্রতি বছর মূলত গবেষণার জন্য বেশ বড় অংকের নিউজিল্যান্ডিয়ান ডলার খরচ করে থাকে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে বিভিন্ন স্কলারশিপের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীরা খুব সহজেই বিনা পয়সায় নিজের পড়াশোনা শেষ করতে পারে। তাছাড়া পার্ট টাইম জব তো করা যায় ই। যা দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা নিউজিল্যান্ডে তাদের মাসিক খরচাদি চালাতে পারে। এছাড়া স্কলারশিপগুলি অনেক ক্ষেত্রেই ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনযাপনের খরচও বহন করে থাকে। নিউল্যান্ডের কিছু পরিচিত স্কলারশিপগুলি হলো –

নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি কিভাবে খুঁজে পাবো?

নিউজিল্যান্ড সরকার একটি নির্দিষ্ট অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করে থাকে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য, Study in New Zealand। এখানে এক ওয়েব সাইটেই সব তথ্য দেওয়া আছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সম্পর্কে।

এই ওয়েব সাইট মতে, নিউজিল্যান্ডে মোট ৮ টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। যার সবই বিশ্বে প্রথম সারির অন্তর্ভূক্ত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হলো;

তাছাড়া নিউজিল্যান্ডে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি বিষয়ে আরও খুঁটিনাটি জানতে আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগাযোগ করতে পারেন। তাছাড়া কোনো ভুল হলে নিচের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন আপনাদের অভিমত। ধন্যবাদ।

 

আমার আরও লেখা পড়তে পারেন, উচ্চশিক্ষায় গন্তব্য নির্ধারণে যা আপনাদের সহযোগিতা করতে পারে = 

ভ্রমণ সম্পর্কিত লেখা

বিজ্ঞান ভিত্তিক লেখা

 

Signing Off

Jowad

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *