বিদেশে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ : পোষ্টগ্র্যাজুয়েট
বিদেশে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ বলতে সাধারণত মাস্টার্স বা পিএইচডিতে স্কলারশিপ বোঝানো হয়। কেননা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট তুলনায় পোষ্টগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে বৃত্তির সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। তাই বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি। বাংলাদেশ থেকে যারা স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়ালেখা করতে যান তাদের মোটামুটি ৮০ শতাংশই মাস্টার্স প্রোগ্রামে যান।
আন্ডারগ্র্যাজুয়েট এবং পোষ্টগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে আবেদনের যোগ্যতার কিছু পার্থক্য রয়েছে। সহজেই বোঝা যাচ্ছে পোষ্টগ্র্যাজুয়েট বা স্নাতকোত্তর পর্যায়ে আরও বেশি রিকুয়্যারমেন্টস বা যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। এর আগের লেখায় বিদেশে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ : আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিরোনামে স্নাতক পর্যায়ে স্কলারশিপে আবেদন করার জন্য বেসিক রিকুয়্যারমেন্টস ( ভাষাগত দক্ষতা, সুপারিশ পত্র, মোটিভেশন লেটার ইত্যাদি) সম্পর্কে আলোচনা করেছি।
আজকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে বেসিক রিকুয়্যারমেন্টস সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করে অন্যান্য সকল যোগ্যতা নিয়ে আলোচনা করবো।
ভাষাগত দক্ষতা
বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই স্নাতকোত্তর কোর্স ইংরেজিতে অফার করা হয়ে থাকে। তাই ইংরেজিতে প্রোফেসিয়েন্সি দেখাতে পারলে স্কলারশিপের অভাব হবে না।
লক্ষ্য যদি হয় ইউরোপ তবে IELTS বা TOEFL এর একটি ভালো স্কোর যথেষ্ট হবে। কিন্তু আমেরিকা, কানাডার মতো দেশে আপনাকে GRE করতে হবে। GRE নিয়ে বিস্তারিত একটু পরে বলছি।
অনেক দেশে সংশ্লিষ্ট দেশের ভাষা দক্ষতার প্রমাণ দেখাতে হয়। যেমন জার্মানির অনেক ইউনিভার্সিটি জার্মান ভাষা (B2/C1) চাইতে পারে। তাছাড়া নির্দিষ্ট দেশের নির্দিষ্ট ভাষা জানাটা লেখাপড়ার বাইরেও জরুরি।
সুপারিশ পত্র
স্কলারশিপ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই নির্ভর করে ভালো সুপারিশ পত্রের উপর। এজন্য ভার্সিটি অবস্থায়ই প্রিয় শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। তাদের কাছে আপনার যোগ্যতা ও অর্জনগুলো তুলে ধরতে হবে যেন তারা সুপারিশ পত্র লেখার সময় সেগুলো যথাযথ উল্লেখ করতে পারেন।
মোটিভেশন লেটার
কেন আপনার বৃত্তি প্রয়োজন? বৃত্তি পেলে কি উপকার হবে? সেটা কর্তৃপক্ষকে বুঝাতে হবে আপনাকে। ব্যাচেলরের পর মাস্টার্সে আপনার পরিকল্পনাসমূহ সাবলীল ভাষায় ফুটিয়ে তুলতে হবে। কোর্স রিলেটেড একটি সুন্দর পরিকল্পনাই অনেক সময় বৃত্তি পাওয়ার চাবিকাঠি হয়ে উঠতে পারে।
মোটিভেশন লেটার লিখতে হবে নিজেকেই। তবে কোন ফরম্যাটে লিখবেন বা কিভাবে গুছিয়ে লিখবেন সে ব্যাপারে ধারণা পেতে অভিক্ষ কারো থেকে পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে।
উপরোক্ত যোগ্যতাগুলো আন্ডারগ্র্যাজুয়েট বা পোষ্টগ্র্যাজুয়েট উভয় পর্যায়ে মোটামুটি কমন। এছাড়া পোষ্টগ্র্যাজুয়েট পর্যায়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ রিকুয়্যারমেন্টস দরকার হয়।
গবেষণাপত্র বা থিসিস
সারা বিশ্বের যেকোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ভর্তির জন্য থিসিস পেপার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৃত্তি আবেদনের যোগ্যতার বিচারে এটি আবশ্যিক বলা চলে। আপনি স্নাতক পর্যায়ে যে বিষয়ে পড়ছেন সে বিষয়ে আপনার গবেষণা কিরকম সেটা অনেক অর্থবহন করে।
গবেষণাপত্র একটি ভালো জার্নালে প্রকাশ হওয়া দরকার। আপনার গবেষণা যদি কোনো আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয় সেটি বৃত্তি পাওয়ার জন্য খুবই সহায়ক হবে। তবে যদি ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত না হয় তবুও হতাশ না হয়ে চেষ্টা করা উচিত।
GRE(Graduate Record Examinations)
আগেই বলেছি ইউরোপের ইউনিভার্সিটিতে ILETS বা TOEFL হলেই হয়। কিন্তু আমেরিকা, কানাডার মত দেশে এর পাশাপাশি GRE দরকার হয়। সাধারণত স্কলারশিপের জন্য মোট ৩০০ স্কোরকে নূন্যতম ধরা হয়। তবে চাহিদা সম্পন্ন সাবজেক্ট বা ইউনিভার্সিটির জন্য আরও বেশি, যেমন ৩২০ স্কোর, হতে পারে।
সাইন্স ও আর্টস ব্যাকগ্রাউন্ড শিক্ষার্থীদের GRE এবং কমার্সের শিক্ষার্থীদের এক্ষেত্র GMAT দিতে হয়।
৪ মাস GRE প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট। তবু নিজের অবস্থান নিজে বুজে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত। এজন্য নিচে কিছু সহায়িকা বইয়ের নাম উল্লেখ করা হলো যা আপনি নীলক্ষেত থেকে সংগ্রহ করতে পারেন।
Barron’s new word list
Word Smart I & II
Princetion verbal workbook
Nova’s Math Bible
Nova’s GRE
Word Smart I & II বইটি অবশ্যই সংগ্রহ করা উচিত।
ইন্টার্নশিপ/ কাজের অভিজ্ঞতা
মাস্টার্সে ভর্তির জন্য অন্তত ১-২ বছরের সংশ্লিষ্ট কোর্সের ওপর চাকরির অভিজ্ঞতা চাওয়া হয়। আর স্কলারশিপের জন্য ২ বছরের অভিজ্ঞতা চাইতে পারে। তাই ব্যাচেলর থাকাকালে কমপক্ষে ২ বছর বাকি থাকতে কোর্স রিলেটেড কাজের সন্ধান করুন। দুই বছর কাজের অভিজ্ঞতার মানে দাড়ায় আপনি আপনার ফিল্ডে যথেষ্ট অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। তাই আপনাকে স্কলারশিপ প্রদান করা হলে সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একটি লস প্রজেক্ট হবে না এটি অনুমান করাই যায়😉
দেশে ইন্টার্নশিপ পাওয়ার জন্য সিজিপিএ -এর উপর গুরুত্ব দিন। কারণ নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান আপনার সিজিপিএ -কে মানদণ্ড হিসেবে দেখবে। চাকরি পাওয়া কঠিন হলেও ইন্টার্নিশিপ পাওয়া কিন্তু খুব কঠিন নয়। একাডেমিক রেজাল্ট ভালো হলে সহজেই ইন্টার্নশিপ পাওয়া যায়।
সিজিপিএ ভালো না হলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এই কমতিটুকু পূরন করতে পারেন অন্যান্য যোগ্যতা দিয়ে। যেমন সামাজিক কার্যক্রম, ভালো নেটওয়ার্কিং এমনকি আপনার আগ্রহ দেখেও অনেক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করতে পারে। আর যত বেশি পারেন সিভি জমা দিতে থাকুন; বলা যায় না কোথায় মিলে যায়। মোটকথা লেগে থাকুন।
এইতো মোটামুটি আলোচনা শেষ। এছাড়া নিচে আরও কিছু দরকারি তথা দেওয়া হলো।
নম্বরপত্র জমা
বাহিরের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়ার জন্য দরকারি কাগজপত্র আগে থেকেই গুছিয়ে রাখা ভালো। এলক্ষ্যে সকল একাডেমিক নম্বরপত্র বা ট্রান্সক্রিপ্ট ইংরেজি ভার্সনে শিক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করতে হবে। ট্রান্সক্রিপ্ট সাধারণত ই-মেইল করে পাঠানো যায়
আবেদন করার সময়
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে আবেদন করার সময়সীমা থাকে। সে সময়ের মধ্যেই আপনাকে আবেদন করতে হবে। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট, বিভিন্ন দৈনিক, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এবং বিভিন্ন সেমিনার বা স্কলারশিপ সম্পর্কিত ওয়েবপোর্টালগুলোর ওপর নজর রাখতে হবে।
বলা হয়ে থাকে পরিশ্রমীরা বিফল হয় না। এই লেখাটি পড়ে কারো কোনো উপকার হবে না যদি কাজে না লাগানো হয়। তাই আত্মবিশ্বাসের সাথে লেগে থাকুন সফলতা ধরা দিবেই।
এছাড়া জার্মানিতে মাস্টার্সে ভর্তি সম্পর্কিত আমাদের ইউটিউব ভিডিও