ভারতের ICCR স্কলারশিপ কি আপনিও পেতে পারেন?
ভারতের ICCR স্কলারশিপ সম্পর্কে আপনি কি এর আগে কখনো শুনেছেন? হয়ত কেউ কেউ শুনে থাকবেন। কিন্তু স্কলারশিপ প্রত্যাশী অনেকেই এটি সম্পর্কে জানেন না। না জানার ফলে যোগ্যতা থাকা স্বত্বেও আমরা আবেদনই করতে পারি না। আজ ইউরোপ-আমেরিকা নয়, ঘুরে আসবো প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে। তাই দেরি না করে চলুন পার্শ্ববর্তী দেশের ILETS ছাড়া একটি চমৎকার স্কলারশিপ সম্পর্কে জেনে ফেলি।
ICCR স্কলারশিপ কি
Indian Council For Cultural Relations একটি সংগঠন যা বিশ্বব্যাপী ৭৩টি দেশের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করে থাকে। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে ২০০ জন শিক্ষার্থীর এই স্কলারশিপ পাওয়ার সৌভাগ্য হয়। এদের মধ্যে আন্ডারগ্র্যাড ১৪০টা, পোস্টগ্র্যাড ৪০টা এবং এমফিল/পিএইচডি ২০টা। প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ টাকার এই স্কলারশিপটি পাওয়া গেলে, ভারতের নামকরা যেকোনো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবেন গ্রাজুয়েশন করার সুযোগ।
কেন ICCR স্কলারশিপে আবেদন করবেন
এটা আবার কেমন প্রশ্ন তাইনা? কিন্তু অনেকেই ইউরোপ, আমেরিকার নেশায় ভারতকে আর পাত্তা দেয় না। জানেন কিংবা না জানেন, যেকোনো দেশের একটি শিক্ষাবৃত্তি প্রকৃতপক্ষে অনেক সম্মানের যা আপনার একাডেমিক ফলাফলকে দারুণ অর্থবহ করে তুলে। একটি স্কলারশিপ আপনার পরবর্তী শিক্ষাজীবনে অন্যান্য স্কলারশিপ পেতে সাহায্য করে। যেমন ব্যাচেলরে যদি স্কলারশিপ পেয়ে যান তবে মার্স্টার্সে অন্যান্য দেশে স্কলারশিপ পাওয়ার জন্য এটি প্রধান বিবেচ্য বিষয় হতে পারে।
তাছাড়া ভারতের পোশাকাদি, খাবারদাবার, আবহাওয়া, সংস্কৃতি প্রায় বাংলাদেশের মতোই। খুব সহজেই মানিয়ে নিতে পারবেন। আপনি ভারতের যেখানেই যান বাঙালি পেয়ে যাবেন। সুতরাং বন্ধুর অভাব হবে না।
ICCR স্কলারশিপে কি কি থাকছে
১। প্রতি মাসে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে ১৮ হাজার রুপি, মাস্টার্সে ২০ হাজার রুপি, এমফিল/পিএইচডিতে ২২ হাজার রুপি এবং পোস্ট-ডক্টরালে ২৫ হাজার রুপি করে স্টাইপেন্ড দেয়া হবে।
২। ৫৫০০-৬৫০০ রুপি পর্যন্ত হাউজ রেন্ট এলাওয়েন্স। কিন্তু কোনো মতেই স্কলারশিপপ্রাপ্তদের বরাদ্দকৃত আবাসন বাদ দিয়ে বাইরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকা যাবে না।
৩। বছরে আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে ৫ হাজার রুপি, মাস্টার্সে ৭ হাজার রুপি, এমফিল/পিএইচডিতে ১২ হাজার ৫০০ রুপি এবং পোস্ট-ডক্টরালে ১৫ হাজার ৫০০ রুপি করে কন্টিনজেন্ট গ্র্যান্ট দেয়া হবে।
৪। থিসিস সংক্রান্ত ব্যায়ের জন্য ৭-১০ হাজার রুপি দেয়া হবে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া যাবে।
আবেদন করার যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র :
১। ১৮-৩০ বছর বসয়সীমার মধ্যে যেকেউ ব্যাচেলর, মাস্টার্স বা পিএইচডি প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবে।
২। আন্ডারগ্র্যাজুয়েটে আবেদনের ক্ষেত্রে এইচএসসিতে ইংরেজিতে ৩ বা ৬০ শতাংশ নাম্বার থাকতে হবে। BE/B Tech প্রোগ্রামে আবেদন করতে চাইলে এইচএসসিতে পদার্থ, রসায়ন এবং গণিত থাকতে হবে।
৩। M. Phil/Doctoral/Post-Doctoral প্রোগ্রামের ক্ষেত্রে সিনোপসিস জমা দিতে হবে আবেদনের সাথে।
৪। ছবি।
৫। সকল একাডেমিক মার্কশিট এবং সার্টিফিকেট।
৬। পাসপোর্ট।
৭। এন আই ডি বা জন্ম সনদের ইংরেজি কপি।
৮। ফিজিক্যাল ফিটনেস সার্টিফিকেট।
৯। আবেদন গৃহীত হলে আপনাকে যথাক্রমে লিখিত পরিক্ষা English Proficiency Test (EPT) ও মৌখিক পরিক্ষার জন্য ডাকা হবে।
উল্লেখ্য, সকল কাগজপত্র ইংরেজিতে হতে হবে। আরেকটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, পাসপোর্ট করতে প্রায় ১-২ মাস চলে যায়। তাই আগে থেকেই যেন সব কিছু হাতের নাগালে থাকে সে বিষয়ে নিশ্চত হওয়া দরকার।
আবেদন করার সময়
সাধারণত নভেম্বর-ডিসেম্বরে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় বাংলাদেশের ভারতীয় হাই কমিশনের ওয়েবসাইটে ও প্রথম সারির পত্রিকাগুলোতে। কিন্তু করোনার প্রকোপে ২০২১-২০২২ সেশনে ডেডলাইন ৩০মে ধার্য করা হয়েছে। ICCR-এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করুন iccr.gov.in।
দেশের বাইরে স্কলারশিপ নিয়ে পড়াশুনা নিশ্চয়ই দারুণ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হবে। তাই ICCR স্কলারশিপ হতে পারে একটি সুবর্ণ সুযোগ। পরবর্তী লেখায় কিভাবে আবেদন ফর্ম পূরন করবেন তা নিয়ে বিস্তারিত লিখব। সে পর্যন্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে প্রস্তুতি নিতে থাকুন যেন ICCR কর্তৃপক্ষ ২০০ জন স্কলারশিপপ্রাপ্তদের মধ্যে আপনাকেও আমন্ত্রণ জানায়। Good Luck!
আমার অন্যান্য লেখাগুলো
বিদেশে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ : আন্ডারগ্র্যাজুয়েট
বিদেশে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ : পোষ্টগ্র্যাজুয়েট