রাতে ঘুম না আসলে কি করবেনঃ নিদ্রাহীনতা
নিদ্রাহীনতা একটি মারাত্মক ব্যাধি। আনেকেই এই সমস্যায় পড়েন। দেখা যায় রাতে ঘুমাতে গেলে ঘুম আসেনা। বিছানায় এপাশ-ওপাশ করতে করতেই পেড়িয়ে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। অনেকেই আবার চিন্তা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেলেও ঘুম আসেনা। যাই হোক আপনিও যদি রাতে ঘুম আসেনা বলতে বলতে তিক্ত হয়ে থাকেন তবে এই লেখাটি শুধুই আপনার জন্য। রাতে ঘুম না আসলে কি করবেন? কেনই বা ঘুম আসেনা। কি করলে ঘুম আসবে সেইসকল বিষয় নিয়ে জানার চেষ্টা করব। বলে রাখা ভালো আমি কোন ডাক্তার নই, তবে আমার নিদ্রাহীনতার অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কথা শেয়ার করব। যা আমার বেলায় খুব কাজ করেছে। সুতরাং আশা রাখছি আপনিও যদি এই সমস্যায় থাকেন তবে এটি আপনার বেলাতেও ফলপ্রসু হবে।
আমি মনে করি শান্তিতে ঘুমাতে পারা হচ্ছে আল্লাহর একটি নিয়ামত। কিছু কারনে আমরা এই শান্তির ঘুমকে জাহান্নাতে পরিণত করি। তবে আপনি যদি আপনার সমস্যার কারন এবং কিছু নিয়ম মেনে চলেন তবে আবার শান্তির ঘুমের দেখা পাবেন, ইনশা-আল্লাহ্।
কী কী কারনে ঘুম আসেনা?
আপনার কি কারনে ঘুম আসেনা এটা বলা সত্যিই কষ্টসাধ্য। তবে ঘুম না আসার পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। আপনার রাতে ঘুম না আসার পিছনের কারণ খুঁজে বের করতে পারলে সহজেই এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবেন।
মোবাইল বা কম্পিউটার ব্যবহার না করা
ঘুমানোর আগে মোবাইল, কম্পিউটার বা টিভি দেখা থেকে বিরত থাকুন। অনেকেই বিছানায় শুয়েই মোবাইল টিপতে শুরু করে, যা মোটেও ঠিক নয়। মোবাইল, কম্পিউটার বা টিভির উজ্জ্বল আলো আমাদের মস্তিস্ককে সজাগ রাখে। যার ফলশ্রুতিতে আমাদের ঘুম আসতে দেরি হয়। সুতরাং ঘুমানোর আগে সম্পূর্ণরূপে এগুলো ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
বিছানায় শুয়ে চিন্তা না করা
চিন্তা ভাবনা করেনা এমন মানুষ খুবই কম। তবে বিছানায় শুয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা চিন্তা করা রাতে ঘুম না আসার অন্যতম কারণ। সুতরাং যতটা সম্ভব চিন্তা করা থেকে বিরত থাকুন। যদি চিন্তা করতেই হয় তবে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় চিন্তা করুন।
চা, কফি, কোমল পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন
যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তারা চা, কফি, কোমল পানীয় পান করা থেকে বিরত থাকুন। কেননা এসব খাবারে ক্যাফেইন নামক পদার্থ আছে। যা ঘুম আসতে বাঁধা সৃষ্টি করে। সুতরাং এসব খাবার থেকে বিরত থাকতে হবে।
ধুমপান থেকে বিরত থাকুন
ধুমপান এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা নিকোটিন খুবই উত্তেজক পদার্থ। যারা ধূমপান করে তারা সহজে ঘুমিয়ে পড়তে পারেনা। ঘুম থেকে বার বার জেগে উঠে। ফলশ্রুতিতে ঘুম মারাত্মকভাবে ব্যহত হয়। তাই যারা ধূমপান করেন অন্তত ঘুমানোর ২ ঘন্টা আগে থেকে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকুন।
দিনের বেলায় না ঘুমানো
যারা নিদ্রাহীনতার সমস্যায় আছেন, তাদের দিনের বেলায় ঘুমানোর জন্য নিরুৎসাহিত করা হয়। অনেকেই এমন আছেন যারা শুধুমাত্র দিনের বেলায় ঘুমানোর কারনে রাতের বেলায় ভালো ঘুমাতে পারেন না। সুতরাং এটি পরিহার করতে পারেন।
কি করলে ঘুম আসবে?
এইবার আসি কি করলে সহজেই ঘুম আসবে। যাদের রাতে ঘুম আসেনা তাদের কিছু বিষয় লক্ষ্য রাখা উচিত। যেগুলো আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে গরম দুধ পান করা
ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন। গরম দুধ ঘুম আসতে এবং লম্বা সময় ধরে ঘুমাতে সাহায্য করে। সুতরাং যদি আপনার জন্য সহজলভ্য হয় তাহলে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করুন।
শুতে যাওয়ার আগে ভারী খাবার না খাওয়া
অনেকেই ঘুমানোর ঠিক আগ মুহূর্তেই খাওয়া শেষ করেন, যা মোটেও ঠিক হয়। যাদের রাতে ঘুম কম হয় অথবা ঘুম আসেনা তারা অবশ্যই ঘুমানোর অন্তত ৩ ঘন্টা আগে রাতের খাবার খেয়ে নিবেন।
নিয়মিত ব্যায়াম করা
নিয়মিত ব্যায়াম যেমন শরীর সুস্থ রাখে তেমনি ভালো ঘুম হতে বেশ সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের ঘুম বেশ ভালো হয়। সুতরাং ভালো ঘুমের জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করুন। তবে ঘুমানোর ৩/৪ ঘন্টা আগে তা পরিহার করুন।
অতিরিক্ত কিছু তথ্য
যাদের রাতে ঘুম ভালোভাবে হয়না অথবা ঘুম আসতে দেরি হয় তারা আরোও কিছু দিকনির্দেশনা ফলো করতে পাবেন।
- প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যাওয়া
- সবসময় একই সময়ে ঘুম থেকে উঠার চেষ্টা করা
- শুধুমাত্র ঘুমের সময় বিছানায় শুতে যাওয়া
- বিছানাকে শুধুমাত্র ঘুমের জন্য ব্যবহার করা
- একই বিছানায় ঘুম,পড়াশোনা,খাওয়া দাওয়ার জন্য ব্যবহার না করা
- ঘুম না আসলে বিছানায় শুয়ে থাকবেন না
- শুধুমাত্র ঘুম আসলেই বিছানায় ঘুমাতে যাওয়া
- বিছানায় শুয়েই ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস হাতে নেওয়া থেকে বিরত থাকা
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে আধ ঘন্টা বিশ্রাম নেওয়া
- ঘুমানোর আগে অতিরিক্ত পানি পান করা থেকে বিরত থাকা
এইখানে সম্ভাব্য অনেকগুলো কারন বলা হয়েছে, কোনটা আপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে তা আপনি এতক্ষনে নিশ্চই আন্দাজ করতে পেরেছেন। আপনার সম্ভাব্য কারণ যাই হোক না কেন, তা থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করুন। পাশাপাশি যেই কাজ গুলো করলে ভালো ঘুম হতে সাহায্য করে তা করার চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন ২/১ দিনে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। ধৈর্য সহকারে প্রত্যেকটি কাজ সঠিকভাবে পালন করার চেষ্টা করুন।
পরিশেষে আমার অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই,ঘুমানোর আগে মোবাইল, কম্পিউটার এবং টিভি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। দিনে ঘুমানো থেকে নিজেকে বিরত রাখুন এবং একই সময়ে ঘুমাতে যান। এগুলো মেনে চললেই ইনশা-আল্লাহ সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে।
বিঃদ্রঃ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন প্রকার ঘুমের ওষুধ খাওয়া যাবে না।
লিখেছেন : নাজমুল হাসান
Thanks for sharing very informative information with us. keep sharing more useful information with us.