ধাপে ধাপে অস্ট্রিয়া : ধাপ ১ – বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিতি
পশ্চিম ইউরোপের স্থল বেষ্টিত ছোট্ট একটি রাষ্ট্র ‘অস্ট্রিয়া’। ইউরোপের নৈস্বর্গিক আল্পস পর্বতমালার প্রায় ৬২ শতাংশ অঞ্চল নিয়ে গঠিত দেশটির রাজধানী হলো ভিয়েনা। ধারণা করা হয়ে থাকে, অস্ট্রিয়ার ইতিহাসের সূচনা হয় খ্রিষ্টাব্দ ৯৭৬ সালে লেওপোল্ড ফোন বাবেনবের্গের হাত ধরে। তবে তখন তিনি অস্ট্রিয়ার অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে নিলেও তা বেশিদিন টিকে থাকতে পারেনি। পরবর্তীতে খ্রিষ্টাব্দ ১২৭৬ সালে রাজা প্রথম রুডোলফ হাবসবুর্গ অস্ট্রিয়ার প্রথম শাসক হন এবং হাবসবুর্গ শাসনামলের সূচনা করেন। অটোমান সাম্রাজ্যের শাসনের পূর্বে হাবসবুর্গ রাজবংশের রাজারা প্রায় ৭৫০ বছরের কাছাকাছি সময় অস্ট্রিয়া শাসন করেন এবং রাজবংশীয় বিবাহের মাধ্যমে ইউরোপের বেশ বড় একটা অংশে হাবসবুর্গ সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান।
তবে ইউরোপের ৪৮° ১২’ উত্তর ১৬° ২১’ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের দেশটির উত্তরে রয়েছে জার্মানি ও চেক প্রজাতন্ত্র, পূর্বে রয়েছে স্লোভাকিয়া ও হাঙ্গেরি, দক্ষিণে রয়েছে স্লোভেনিয়া এবং ইতালি এবং পশ্চিমে রয়েছে লিচটেনস্টাইন ও অপার সৌন্দর্যের দেশ সুইজারল্যান্ড। আর অস্ট্রিয়ার ঠিক উত্তরাংশে রয়েছে আল্পস পর্বতমালা। দেশটির রয়েছে ৯টি ফেডারেল ষ্টেট বা স্বায়ত্তশাসিত রাজ্য। ফেডারেল পরিষদ থাকা স্বত্বেও অস্ট্রিয়ার সরকারি রাষ্ট্রভাষা হলো জার্মান। তবে এটা প্রকৃত জার্মান ভাষার একটি আংশিক পরিবর্তিত রূপ। যাকে বলা হয়, Schönbrunner Deutsch (শ্যোনব্রুনার ডয়েচ) বা রাজকীয় জার্মান ভাষা।
জার্মান ভাষাভাষীর এই দেশটিতেও বিনামূল্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করা যায়। এজন্য পুরো বিশ্বের মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের অন্যতম পছন্দের জায়গা হলো অস্ট্রিয়া। চলুন আজ আমরাও জেনে নেই কিভাবে বাংলাদেশ থেকে আমরা অস্ট্রিয়ায় যেতে পারব উচ্চশিক্ষার জন্য। আজকের প্রথম ধাপে থাকছে অস্ট্রিয়ার বড় বড় শহর এবং বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিতি।
রাজ্য এবং রাজধানী
States | Capitals |
Vienna (Wien) | Vienna |
Lower Austria (Niederösterreich) | Sankt Pölten |
Upper Austria (Oberösterreich) | Linz |
Styria (Steiermark) | Graz |
Tyrol (Tirol) | Innsbruck |
Carinthia (Kärnten) | Klagenfurt |
Salzburg | Salzburg |
Vorarlberg | Bregenz |
Burgenland | Eisenstadt |
বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিতি
অস্ট্রিয়ার সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলি মূলত ২ ভাগে বিভক্ত।
অস্ট্রিয়ার ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হলো স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। অর্থাৎ, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নিজেদের প্রশাসনিক সকল সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিতে পারে এবং তাদের প্রশাসন পরিচালন কর্মকান্ডের জন্য সরকারের দ্বারস্থ হতে হয় নাহ।
এগুলি অনেকটা বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মতই।
অস্ট্রিয়ার প্রাইভেট বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হলো সম্পূর্ণ ব্যক্তি কিংবা কোনো ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের হতে থাকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলির প্রতিটিই স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং নিজেদের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিতে তারা কারও কাছে দায়বদ্ধ নয়।
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও অনেকটা ফেডারেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মতই।
অস্ট্রিয়ার সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাটি –
প্রয়োজনীয় তথ্যাদি
অস্ট্রিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভর্তি প্রক্রিয়া অনেকটাই জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মত। যে কেউ চাইলেই দেশ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক (HSC) শেষ করে সরাসরি অস্ট্রিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভর্তি হতে পারবে নাহ। বাংলাদেশ থেকে ব্যাচেলর্স বা স্নাতক পর্যায়ে পড়তে যেতে চাইলে তাকে অবশ্যই দেশে ১২ বছরের প্রাকঃ বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা বা স্কুলিং শেষ করে সরকার অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলমান আছে এবং কমপক্ষে ১ বছরের পড়াশোনা শেষ হয়েছে, তা প্রমাণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় এবং কোর্সভেদে বিভিন্ন রকমের ক্রেডিট যোগ্যতা চাইতে পারে অস্ট্রিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়গুলি।
মনে রাখতে হবে, আপনি অস্ট্রিয়াতে ঠিক সেই বিষয়েই আবেদন করতে পারবেন, যে বিষয়ে দেশে পড়াশোনা করছেন। কেউ যদি মনে করে, দেশে তড়িৎ প্রকৌশল নিয়ে পড়াশোনা করে অস্ট্রিয়াতে মাইনিং প্রকৌশল বিষয়ে ভর্তি হবে, তার সে স্বপ্ন গুঁড়ে বালি।
উল্লেখ্য, যারা ব্যাচেলর বা স্নাতক পর্যায়ে অস্ট্রিয়াতে যেতে চান, তাদেরকে অস্ট্রিয়াতে যাবার পর একটি প্রিপারেটরি পরীক্ষা দেওয়া লাগবে। সে পরীক্ষাতে উত্তীর্ন হলেই কেবল আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার অনুমতি পাবেন।
তাছাড়া অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন ফ্যাক্ট সম্পর্কে জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন –
অস্ট্রিয়ার বড় বড় শহরগুলি সম্পর্কে জানতে এই লেখাগুলি পড়তে পারেন –
স্বপ্ন মানুষকে আটকে রাখতে পারে না। তাড়া করে নিয়ে ফেরে, সকল বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে। আমাদের আজকের আলোচনাও ছিল হাজারো ছাত্র-ছাত্রীর রাজকীয় স্বপ্নের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সম্পর্কে। পরবর্তি আলোচনায় আমরা জানবো, আমাদের দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে। যেখানে বিস্তারিত থাকবে, কী কী যোগ্যতার পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে আবেদন করা যায় আল্পসের চূড়ার ছোট্ট দেশ অস্ট্রিয়ায়…
ধন্যবাদ
পরবর্তি আলোচনা, ধাপে ধাপে অস্ট্রিয়া : ধাপ ২ – কাগজাদি ও আবেদন
তৃতীয় আলোচনা, ধাপে ধাপে অস্ট্রিয়া : ধাপ ৩ – ভিসা আবেদন