ধাপে ধাপে অস্ট্রিয়া : ধাপ ২ – কাগজাদি ও আবেদন

প্রথম ধাপে আমরা জেনেছিলাম, মধ্য ইউরোপের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধ দেশ অস্ট্রিয়ার সকল রাজ্যের প্রতিটি ফেডারেল এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সম্পর্কে। এই পর্বের দ্বিতীয় ধাপে আমরা বিস্তারিত জানব, কী কী যোগ্যতার ভিত্তিতে এবং কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সকল বিষয়গুলিতে আবেদন করতে হয়। তাহলে চলুন, শুরু করা যাক…


অস্ট্রিয়াতে কী কী ভাষায় পড়াশোনা করা যায়?

অস্ট্রিয়ার সরকারি ভাষা হলো জার্মান। জার্মানির প্রচলিত জার্মান থেকে অস্ট্রিয়ান জার্মান ভাষা কিছুটা ভিন্ন। আর উচ্চশিক্ষায় অস্ট্রিয়ার অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পড়াশোনা জার্মান ভাষাতে হয়ে থাকে। তবে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য অস্ট্রিয়াতে ইংরেজি ভাষাতেও পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। প্রশাসনিক তথ্যের ভিত্তিতে অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষা প্রদান করা হয়ে থাকে ৩ মাধ্যমে –

  • সম্পূর্ণ জার্মান ভাষার মাধ্যম
  • সম্পূর্ণ ইংরেজি ভাষার মাধ্যম
  • আংশিক জার্মান এবং আংশিক ইংরেজি ভাষা মাধ্যমে

আবেদনের জন্য কী কী কাগজাদি প্রয়োজন?

তালিকাকাগজাদিকি করা দরকার
SSC Certificate (Minimum B Grade)৩ কপি শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত ও নোটারি করতে হবে
SSC Transcript৩ কপি শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত ও নোটারি করতে হবে
HSC Certificate (Minimum B Grade)৩ কপি শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত ও নোটারি করতে হবে
HSC Transcript৩ কপি শিক্ষাবোর্ড, শিক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত ও নোটারি করতে হবে
1 Year BSc or Honours Running Certificate (ব্যাচেলরে আবেদনের জন্য)৩ কপি রেজিস্ট্রার, শিক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত ও নোটারি করতে হবে
Bachelors Certificate (মাস্টার্সে আবেদনের জন্য)৩ কপি রেজিস্ট্রার, শিক্ষা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত ও নোটারি করতে হবে
NID or Passport৩ কপি যেকোনো গেজেটেড অফিসার দ্বারা সত্যায়িত করতে হবে
IELTS Certificate (Minimum 5.5 in Each Band)
German Language Certificate (If Required)
১০Recommendation Letter (মাস্টার্সে আবেদনের জন্য)২ জন ভিন্ন প্রফেসরের কাছ থেকে দুইটি
১১Motivation Letter অথবা Letter of Purpose
© eGal Authority – Jowad Md Madha

কোন কোন বিষয়গুলিতে আবেদন করা যাবে?


আবেদনের সময় ও প্রক্রিয়া

অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষার জন্য বছরে সাধারণত ২ সময় আবেদন করা যায়।

  • Winter or Spring Intake বা শীতকালীন ইনটেক | আবেদন গ্রহণ করা হয়ে থাকে সাধারণত ০১ মার্চ – ০৫ সেপ্টেম্বর তারিখের মধ্যে
  • Summer Intake বা গ্রীষ্মকালীন ইনটেক | আবেদন গ্রহণ করা হয়ে থাকে সাধারণত ০১ ডিসেম্বরের – ০৫ ফেব্রুয়ারি তারিখের মধ্যে

আবেদনের জন্য প্রথমে আপনার প্রতিটি কাগজাদির ৩ সেট কপি করবেন। সাদাকালো ফটোকপির থেকে রঙিন স্ক্যানকপি করার জন্য আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ থাকবে। এগুলির মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের সনদপত্র এবং নম্বরপত্র নিয়ে স্ব স্ব শিক্ষাবোর্ড থেকে সত্যায়িত করতে হবে। সত্যায়িত করতে সর্ব সাকুল্যে ১০০/২০০ টাকা খরচ হতে পারে। এরপরে আপনার ব্যাচেলরের কাগজগুলি আপনাকে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস থেকে সত্যায়িত করতে হবে। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় ভেদে চার্জ ভিন্ন রকম হতে পারে।

এবার এই একাডেমিক সনদগুলি নিয়ে আপনাকে আগে যেতে হবে ঢাকাস্থ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। সেখানে তারা বিনামূল্যে আপনার কাগজ সত্যায়িত করে দিবে। এরপরে সেগুলি নিয়ে আপনাকে যেতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। সেখানেও একাডেমিক কাগজগুলি সত্যায়িত করতে হবে এবং সাথে ভিসা আবেদনের জন্য পুলিশ ক্লিয়ারেন্সও সত্যায়িত করতে হবে। পুলিশ ক্লিয়ারেন্সের বিষয়ে পরবর্তি ধাপে আলোচনা করা হবে।

একাডেমিক কাগজগুলি সত্যায়িত করা হয়ে গেলে, সেগুলি নোটারি করাতে হবে। আমি ঢাকা ফার্মগেট থেকে নোটারাইজ করিয়েছিলাম। সেখানে কিছুটা কমমূল্যে নোটারি করা যায়। কাগজ প্রতি তারা ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ টাকা চার্জ করে থাকে।

একাডেমিক কাগজের কাজ শেষ। এবার আপনার পরিচয় বহনকারী জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা পাসপোর্টের ইনফরমেশন পাতার ৩ কপি সত্যায়িত করতে হবে। এটি আপনি যেকোনো গেজেটেড অফিসার দ্বারা সত্যায়িত করতে পারেন। আমার মা তৎকালীন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন গেজেটেড অফিসার হওয়ায়, আমি তার কাছ থেকেই করিয়েছিলাম।

এবার আপনার সব ফাইলগুলি নিয়ে আপনাকে চলে যেতে হবে ঢাকার অস্ট্রিয়ান কনস্যুলেট অফিসে। সেখানে আপনার সকল কাগজ তারা সত্যায়িত করে দিবে এবং VFS Global এ পাঠিয়ে দিবে। আপনি VFS Global এ পাঠাতে না চাইলে বা নিজে ভারতে গিয়ে আবেদন করতে চাইলে, শুধুমাত্র সত্যায়িত করলেই হবে।

আপনার দৌড়াদৌড়ির কাজ শেষ এখানেই। এবার আপনার সংগ্রহে থাকা প্রতিটা সত্যায়িত এবং নোটারি করা কাগজ এপিঠ-ওপিঠ স্ক্যান করুন। স্ক্যান করা কাগজগুলি নির্দিষ্ট নামে আলাদা আলাদা পিডিএফ (PDF) ফাইল করে সাজিয়ে নিন। যেমনঃ

  • SSC_Certificate.pdf (এই ফাইলের মধ্যে শুধুমাত্র মাধ্যমিকের সত্যায়িত ও নোটারি করা সনদের দুইপাশের পৃষ্ঠার স্ক্যান কপি থাকবে)
  • SSC_Transcript.pdf (এই ফাইলের মধ্যে শুধুমাত্র মাধ্যমিকের সত্যায়িত ও নোটারি করা নম্বরপত্রের দুইপাশের পৃষ্ঠার স্ক্যান কপি থাকবে)
  • HSC_Certificate.pdf (এই ফাইলের মধ্যে শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের সত্যায়িত ও নোটারি করা সনদের দুইপাশের পৃষ্ঠার স্ক্যান কপি থাকবে)
  • HSC_Transcript.pdf (এই ফাইলের মধ্যে শুধুমাত্র উচ্চ মাধ্যমিকের সত্যায়িত ও নোটারি করা নম্বরপত্রের দুইপাশের পৃষ্ঠার স্ক্যান কপি থাকবে)
  • Bachelors_Certificate.pdf (এই ফাইলের মধ্যে শুধুমাত্র ব্যাচেলরের সনদের সত্যায়িত ও নোটারি করা সনদের দুইপাশের পৃষ্ঠার স্ক্যান কপি থাকবে)
  • Bachelors_Transcript.pdf (এই ফাইলের মধ্যে শুধুমাত্র ব্যাচেলরের নম্বরপত্রের সত্যায়িত ও নোটারি করা সনদের দুইপাশের পৃষ্ঠার স্ক্যান কপি থাকবে)
  • NID.pdf অথবা Passport.pdf (এই ফাইলে শুধুমাত্র সত্যায়িত করা জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা পাসপোর্ট থাকবে)
  • IELTS.pdf (এই ফাইলে শুধুমাত্র IELTS পরীক্ষার সার্টিফিকেটই থাকবে)
  • Deutsche.pdf (এই ফাইলে শুধুমাত্র জার্মান ভাষার সার্টিফিকেটই থাকবে)
  • RecommendationLetter_01.pdf (এই ফাইলে শুধুমাত্র প্রথম প্রফেসরের রেকোমেন্ডেশন লেটারই থাকবে)
  • RecommendationLetter_02.pdf (এই ফাইলে শুধুমাত্র দ্বিতীয় প্রফেসরের রেকোমেন্ডেশন লেটারই থাকবে)
  • MotivationLetter.pdf বা LetterofPurpose.pdf (এই ফাইলে শুধুমাত্র লেটারটাই থাকবে)

আবেদন করব কীভাবে?

আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে চান, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটে তথ্য পাবেন আবেদনের প্রক্রিয়া নিয়ে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন পোর্টালে আবেদন গ্রহণ করে থাকে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেইল করে সব কাগজাদি পাঠাতে হয়। আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পোস্ট সার্ভিসের মাধ্যমেও ডকুমেন্ট পাঠাতে হতে পারে। যা আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েব সাইটেই তথ্য পাবেন।

তথ্য পেতে অসুবিধা হলে আমাদের eGal | Facebook Group এ পোস্ট করেও তথ্য নিতে পারেন।


তাছাড়া অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন ফ্যাক্ট সম্পর্কে জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন –


অস্ট্রিয়ার বড় বড় শহরগুলি সম্পর্কে জানতে এই লেখাগুলি পড়তে পারেন –


এখানেই শেষ করছি আবেদন প্রক্রিয়ার সকল আলোচনা। ভিসা সংক্রান্ত পরবর্তী ধাপের আলোচনা পড়ার নিমন্ত্রণ রইলো। ধন্যবাদ।

পূর্ববর্তী আলোচনা, ধাপে ধাপে অস্ট্রিয়া : ধাপ ১ – বিশ্ববিদ্যালয় পরিচিতি

পরবর্তি আলোচনা, ধাপে ধাপে অস্ট্রিয়া : ধাপ ৩ – ভিসা আবেদন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *