ধাপে ধাপে অস্ট্রিয়া : ধাপ ৩ – ভিসা আবেদন
আবার চলে এলাম ইউরোপের অন্যতম ধনী রাষ্ট্র অস্ট্রিয়ায় উচ্চশিক্ষার সর্বশেষ ধাপের আলোচনা নিয়ে। প্রথম ধাপে আমরা জেনেছিলাম, অস্ট্রিয়ার সকল বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে। সেখানের বিস্তারিত আলোচনার পর দ্বিতীয় ধাপে আমরা জেনেছি, অস্ট্রিয়াতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে আবেদনের জন্য কি কি যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন এবং কোন কোন কাগজাদি প্রস্তুত করতে হবে, সে সম্পর্কে। গত দুই ধাপের আলোচনা না পড়ে থাকলে নিচে চাপ দিয়ে আলোচনাগুলি পড়ে আসতে পারেন…
আজকের আলোচনায় আমরা জানব, কীভাবে ভিসার জন্য আবেদন করতে হয় এবং কি কি কাগজ প্রস্তুত করতে হয় ভিসার জন্য ইন্টার্ভিউ দেওয়ার পূর্বে। তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক, ভিসা সংক্রান্ত সকল খুঁটিনাটি…
ভিসার জন্য আবেদন কোথায় করব?
অস্ট্রিয়ার ভিসা আবেদন সরাসরি এমব্যাসিতে করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এমব্যাসি না থাকায়, আমরা দুইভাবে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারি –
- সরাসরি ভারতের নয়া দিল্লিতে যেয়ে আবেদন করা
- বাংলাদেশে VFS Global এর মাধ্যমে আবেদন করা।
আজকের আলোচনায় আমরা দুই ধরণের আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কেই জানব।
ভারতে যেয়ে কীভাবে আবেদন করা যায়?
বাংলাদেশে অস্ট্রিয়ান এমব্যাসি না থাকায় দীর্ঘ মেয়াদের ভিসার জন্য বাংলাদেশ থেকে ভারতের নয়াদিল্লী তে যেয়ে সরাসরি ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। তবে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ একটা পদক্ষেপ। এজন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে।
১
অস্ট্রিয়াতে উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন শুরু করার সময়ই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে ভারতের ভিসার জন্য আবেদন করে রাখাটা উত্তম। অনেকে মনে করে থাকেন, ভারতের ভিসা পাওয়াটা অনেক জটিল একটি সমীকরণ। কিন্তু তা নয়! বাংলাদেশ থেকে অনেক সহজেই ভারতের ভিসা পাওয়া যায়। আপনাকে শুধুমাত্র অস্ট্রিয়ায় আবেদন শুরুর সময়ই ভারতের ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন করে ফেলতে হবে। আবেদনের ১ মাসের মধ্যেই ভারতে ভ্রমণের ভিসা পাওয়া যায়। আর ট্যুরিস্ট ভিসা সাধারণত ৩৬৫ দিন বা পুরো ১ বছরের জন্য দিয়ে থাকে।
২
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটারের সফটকপি অনলাইনে সংগ্রহ করেই ভিসার জন্য আবেদনের প্রস্তুতি গ্রহণ করাটা সব থেকে উত্তম সিদ্ধান্ত। এজন্য ভারতে অবস্থিত নয়াদিল্লির অস্ট্রিয়ান এমব্যাসিতে সরাসরি কল করেও এপোয়েনমেন্ট ঠিক করা যায় আবার, ইমেইল করেও এপোয়েনমেন্ট নেওয়া যায়। তবে আমার ব্যক্তিগত মতামত, ইমেইল করেই এপোয়েনমেন্ট সংগ্রহ করাটা উত্তম। এজন্য আপনাকে অস্ট্রিয়ান এমব্যাসির মেইল, new-delhi-ka@bmeia.gv.at তে একটি মেইল করে তাদের কাছে এপোয়েনমেন্টের আবেদন করতে হবে। সাধারণত সর্বোচ্চ ১০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আপনাকে ফিরতি মেইলের মাধ্যমে এপোয়েনমেন্ট তারিখ এবং সময় জানিয়ে দিবে অস্ট্রিয়ান এমব্যাসি।
৩
এপোয়েনমেন্ট তারিখ পাওয়ার পর দ্রুত সময়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। কারণ, এমব্যাসি সাধারণত নির্ধারিত এপোয়েনমেন্ট তারিখের ৭ থেকে ১০ দিন আগে ইমেইল করে থাকে। এমন সময়ে ট্রেনের টিকিট পাওয়াটা যেমন দুষ্কর, তেমনি আকাশযানে ভাড়া থাকে আকাশচুম্বী! তবে বাসে খুব সহজেই যাওয়া যায়। কিন্তু নয়াদিল্লির পানে কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দেওয়ার যাত্রায় বাস ভ্রমণ ততটা সুখকর ঠেকে না আমার কাছে। তাই আমার মন্তব্য ভেঙে ভেঙে ট্রেনে যাওয়াটা উত্তম! এজন্য ঢাকা থেকে কোলকাতার সরাসরি ট্রেন না পেলে আপনি ঢাকা থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেসে চড়ে বেনাপোল স্থলবন্দরে যেতে পারেন। এরপর বেনাপোল স্টেশন থেকে রিক্সা চড়ে বেনাপোল ইমিগ্রেশন পয়েন্টে যেয়ে সেখান থেকে ইমিগ্রেশন সম্পর্কিত কাজ শেষ করে ভারতে প্রবেশ করতে পারেন। যশোর বেনাপোলের ঠিক ওপারেই রয়েছে ভারতের বনগাঁ স্টেশন। সেখান থেকে আপনি মাত্র ৩০ রুপি মত খরচ করে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন ভারতের কোলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে।
৪
কোলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন থেকে আপনাকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে রাজধানী এক্সপ্রেসের টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। রওনা দেওয়ার ২ দিনের মধ্যে আশা করা যায় আপনি পুরনো দিল্লির স্টেশনে পৌঁছে যাবেন। দিল্লিতে নামার পর প্রথম কাজ, ভাল পরিবেশে হোটেল খোঁজা। নয়াদিল্লির পাহাড় গঞ্জ এলাকায় অত্যন্ত সুলভ মূল্যে হোটেল পাওয়া যায়। পাহাড়গঞ্জ এলাকাকে লাল এলাকা বললেও ভুল হবে না। এখানে রয়েছে হাজার হাজার হোটেল, বার, নাইট ক্লাবসহ বহু জিনিস। আপনি যদি এই ধরণের রঞ্জিত এলাকা এড়িয়ে চলতে চান, তবে নয়া দিল্লির কারোল বাঘ এলাকায় অবস্থান করতে পারেন। সেখানেও অনেক হোটেল রয়েছে। তবে সে হোটেলগুলিতে খরচ তুলনামূলক বেশি। যেমনঃ কোনো রুমের ভাড়া যদি পাহাড় গঞ্জে ৮০০ রুপি হয়, সেটি কারোল বাঘে ১০০০ রুপি।
৫
নির্ধারিত এপোয়েনমেন্টের দিনে সকাল সকাল এমব্যাসির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়াটা উত্তম। কেননা, নয়াদিল্লিতেও আমাদের ঢাকার মত মরণ জ্যাম লেগে যায় সকাল বেলা। তবে, জ্যাম থেকে বাঁচতে দিল্লি মেট্রোও ব্যবহার করতে পারেন। এমব্যাসি অবস্থিত ভারতের ডিপ্লোম্যাটিক এরিয়া, চ্যানিক্কিয়া পুরিতে। সেখানেই সারি সারি করে পাশাপাশি রয়েছে প্রতিটি দেশের এমব্যাসি। যাদের সাথে ভারতের ডিপ্লোম্যাটিক সম্পর্ক রয়েছে। সেখানে যাবার পুর্বে আপনার পোশাক যতটা সম্ভব মার্জিত রাখার চেষ্টা করবেন। আপনি যেহেতু ফর্মাল একটি কাজে যাচ্ছেন, সেহেতু সেখানে লাল-নীল-হলুদের মত পোশাক পড়ে যাওয়াটা এড়িয়ে যাওয়াই উত্তম। মনে রাখবেন, ‘First impression is the Last Impression’!
৬
এমব্যাসিতে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার আগে আপনার পাসপোর্টের ইনফর্মেশন পাতা এবং ভিসা পাওয়ার পাতা দুইটি ফটোকপি করে রাখবেন। কেনোনা, এমব্যাসি একটা লম্বা সময়ের জন্য আপনার পাসপোর্ট সংগ্রহ করে রাখবে। এ সময় দিল্লিতে যেকোনো সমস্যায় আপনার পরিচয় বহন করে এমন কোনো পরিচয়পত্র কিন্তু থাকবে না। এজন্য যতদিন পাসপোর্ট পুনরায় হাতে না পাচ্ছেন, ততদিন অত্যন্ত সাবধানতার সাথে চলাচল করুন এবং যেকোনো বিশৃঙ্খল পরিবেশ এড়িয়ে চলুন। এরপরে এমব্যাসি ডাকলে তাঁদের থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করুন এবং দেশে ফিরে এসে eGal Team সহ আমাকে পুরান ঢাকায় বিরিয়ানির দাওয়াত দিন… হা হা হা!
দেশে বসেই কীভাবে ভিসার আবেদন করা যায়?
ঘরে বসে ভিসার আবেদন করা একদম সহজ। আপনাকে ঢাকাতে অবস্থিত VFS Global Bangladesh এর ওয়েব সাইট থেকে ভিসা ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। সেটার সঠিকভাবে পূরণ করে নিয়ে VFS Global এর নাম্বার (+88) 09606 777 111 কিংবা (+88) 09666 911 387 এ কল দিয়ে এপোয়েনমেন্ট নিন কিংবা, কল করার পর তাঁদের কাছেই জিজ্ঞেস করুন, আপনি কীভাবে নিবেন। মেইল করবেন নাকি ফোনেই হবে। এরপরে এপোয়েনমেন্টের দিন আপনার সকল কাগজ নিয়ে তাদের অফিসে চলে যান। VFS Global Bangladesh এর ঠিকানা –
Visa Application Centre, Delta Life Tower, 4th Floor, Plot 37, Road 45, Gulshan, Dhaka – 1212, Bangladesh
VFS Global Bangladesh সহজেই আপনার ভিসা সংক্রান্ত সকল কাল সম্পাদন করে দিবে এবং ভিসা ফলাফল জানাতে আপনাকে যেদিন ডাকবে, সেদিন ফুড়ুৎ করে যেয়ে ভিসা সম্বলিত পাসপোর্ট নিয়ে চলে আসবেন এবং eGal Team কে বিশাল এক ভোজনের দাওয়াত দিয়ে দিবেন! ব্যাস! সহজ হিসেবনিকেশ… হা হা হা!
Embassy কিংবা VFS Global এ কী কী কাগজ নিয়ে যাব?
- দ্বিতীয় ধাপে যতগুলি কাগজ প্রস্তুত করেছিলেন, সেগুলির ২ সেট কপি নিবেন এবং মূল কপির একসেট নিবেন।
- Application Form
- Appointment Letter
- Work Experience Certificate
- Extra Curricular Certificate (যত যা এজীবনে অর্জন করেছেন) | (এটা অপশনাল)
- Police Clearance (যা অবশ্যই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত করা লাগবে)
- জন্ম নিবন্ধন
- জাতীয় পরিচয় পত্র (যদি থাকে)
- Passport
- Offer Letter
- Sponsor Bank Statement of 6 Months
- স্পন্সরের পরিচয় পত্র
- ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্স | সরকারি চাকুরীজীবী হলে প্রত্যয়ন পত্র
- TIN Certificate of Sponsor
- JOB ID
- ভিসা আবেদনকারীর Bank Account Statement (যেখানে মূল টাকাটা থাকবে)
- Sponsor এর একাউন্ট থেকে আবেদনকারীর একাউন্টে টাকা দেওয়ার Deposite Slip
- Travel Insurance Paper
- Air Ticket Reservation Document
ভিসার জন্য একাউন্টে কত টাকা রাখা লাগবে?
২০১৯ সালের তথ্যমতে, আপনার বয়স ২৪ বছরের কম হলে একাউন্টে ৬১৮৩.৬ ইউরোর সমপরিমাণ কিংবা তার থেকে বেশি টাকা থাকা লাগবে। আর বয়স ২৪ বছরের অধিক হলে আপনার একাউন্টে ১১১৯৬.৭২ ইউরোর সমপরিমাণ কিংবা তার থেকে বেশি থাকা লাগবে।
আবার ২০২০ সালের তথ্যমতে, আপনার বয়স ২৪ বছরের কম হলে একাউন্টে ৬৪০৬.২ ইউরোর সমপরিমাণ কিংবা তার থেকে বেশি টাকা থাকা লাগবে। আর বয়স ২৪ বছরের অধিক হলে আপনার একাউন্টে ১১,৫৯৯.৮ ইউরোর সমপরিমাণ কিংবা তার থেকে বেশি থাকা লাগবে। (এটি এখনো Study in Austria তে আপডেট হয়নি, তবে এমব্যাসিতে আপডেট পরিমাণ টাকাই দেখাতে হবে)
এই টাকা জার্মানির মত ব্লক করার প্রয়োজন নেই
তাছাড়া অস্ট্রিয়ার বিভিন্ন ফ্যাক্ট সম্পর্কে জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন –
অস্ট্রিয়ার বড় বড় শহরগুলি সম্পর্কে জানতে এই লেখাগুলি পড়তে পারেন –
এখানেই শেষ করছি আমাদের অস্ট্রিয়া আবেদনের একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকল পদক্ষেপের আদ্যোপান্ত… আশা করছি ভাল লেগেছে। পোস্টগুলি সবার সাথে শেয়ার করে বাকিদেরও জানার সুযোগ করে দিন এবং আপনার সফলতার গল্প আমাদের কাছে তুলে ধরুন ফেসবুকের eGal গ্রুপে।
ধন্যবাদ
vaia austria tee second time visa extension karar jonna ki same block account dekhate hobe,,,job content diya ki hobe naa,,,kindly boilen,,,