মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতি : এখনি এগিয়ে থাকো
শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে অনেকের মনেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বাসা বাঁধে। একজন চিকিৎসকের পক্ষে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাধ্যমত সেবা ও সাহায্য করা যতটা সম্ভব, অন্য পেশা থেকে ততটা নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করার প্রয়াস একটু হলেও কষ্টকর। তাই পরোপকারের মহান ব্রত অন্তরে ধারণ করে অনেকেই মনের গহীনে চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন বুনে। কিন্তু চিকিৎসক হিসাবে নিজেকে যোগ্যতর করে উপস্থাপন করার পথটা সোজা নয়। এজন্য চাই অসামান্য আত্মনিয়োগ, কঠোর শ্রম, দৃঢ় সংকল্প আর সময়োপযোগী অধ্যয়ন। তাই আজকের আলোচনায় থাকবে মেডিকেল ভর্তি প্রস্তুতিতে এখনি কিভাবে এগিয়ে থাকা যায়।
মান বণ্টন
জীববিজ্ঞান থেকে ৩০, রসায়ন থেকে ২৫, পদার্থবিজ্ঞান থেকে ২০, ইংরেজি থেকে ১৫, সাধারণ জ্ঞানের ভেতরে বাংলাদেশ এবং ইতিহাস থেকে ১০ নম্বরের সর্বমোট ১০০ নম্বরের ১০০টি প্রশ্ন আসে। প্রতিটি প্রশ্নের মান ১। পরীক্ষার মোট সময়কাল ১ ঘণ্টা। এ পরীক্ষার ১০০টি প্রশ্নই থাকে এমসিকিউ অর্থাৎ বহুনির্বাচনীমূলক। এ এমসিকিউ পরীক্ষায় ন্যূূনতম পাস মার্ক হলো ৪০। বহুনির্বাচনীমূলক পরীক্ষায় প্রতি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্তনম্বর থেকে ০.২৫ নম্বর কাটা হয়ে থাকে অর্থাৎ প্রতি ৪টি ভুল উত্তরের জন্য প্রাপ্তনম্বর থেকে ১ নম্বর কাটা যাবে। তবে প্রশ্নে বা অপশনে ভুল থাকলে সবাইকে মার্ক দেওয়া হবে। যেমন ২০২০-২১ সেশনে ২টি প্রশ্নে সমস্যা ছিল। ফলে ২ নম্বর সবাই পেয়েছে।
জীববিজ্ঞান
মেডিকেল পরিক্ষার্থীদের বায়োলজি নিয়ে আর কি বলা যায়। তবে ১ম পত্রের আবুল হাসান ও ২য় পত্রের জন্য গাজী আজমল স্যারের বই দুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি বইয়ের আগাগোড়া সব পড়লে বায়োলজি প্রস্তুতি ৯৮% হয়ে যায়। ২য় পত্র থেকে বেশি প্রশ্ন আসে। তাই ২য় পত্রের প্রতিটি টপিক একদম মুখস্ত থাকা চাই।
রসায়ন
মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং উভয় রকম প্রস্তুতির জন্যই রসায়ন সাবজেক্টটিকে গুরুত্বসহকারে পড়তে হবে। বই এর সব পড়তে হয় না। গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো দাগিয়ে পড়লেই হয়। মেডিকেলে হঠাৎ নতুন কোনো টপিক থেকে প্রশ্ন হয় না। বিগত ১০ বছরের প্রশ্নের টপিকগুলো থেকেই বেশি করে প্রশ্ন আসে। রসায়ন থেকে একটি গাণিতিক সমস্যার প্রশ্ন আসতে পারে।
পদার্থবিজ্ঞান
মেডিকেল ভর্তি পরিক্ষায় জ্ঞানমূলক বা অনুধাবনমূলক প্রশ্ন বেশি আসে, গাণিতিক সমস্যা বেশি আসে না। আসলেও উদাহরণের ছোট ছোট গণিত থেকে আসতে পারে যা বিগত বছরের প্রশ্ন দেখলেই ধারণা পাওয়া যাবে। তাই বিভিন্ন গ্রাফ ও সম্পর্ক, জ্ঞানমূলক প্রশ্ন এসব বারবার পড়তে হবে।
সাধারণ জ্ঞান
যেকোনো সাধারণ জ্ঞানের বই থেকে বাংলাদেশ বিষয়াবলি বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস সম্পর্কে ভালো ভাবে জেনে নিতে হবে। অনেকেই বলে বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, পদার্থ থেকে যেমন মেডিকেল নিশ্চিত করা যায় তেমনি সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজি দিয়ে প্রথম সারির কলেজে ভর্তি হতে পারা যায়। মানে সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজি ভালো করলে অনেক এগিয়ে থাকা যায়। তাই এগুলো শুরু থেকেই নিয়মিত পড়তে হবে। অনেকে পরিক্ষার ১০ দিন আগে সাধারণ জ্ঞান শুরু করে ফলে আর শেষ করতে পারে না, মনেও থাকে না। শুরু থেকে পড়লে শেষে গিয়ে চাপ থাকে না।
ইংরেজি
বিগত বছরগুলোতে মেডিকেল ও ডেন্টাল প্রশ্নপত্রে যেসব বিষয়ের ওপর ইংরেজি প্রশ্নগুলো (যেমন Voice, Narration, Synonym, Antonym, Correction, Spelling, Preposition, Phrase & Idioms ইত্যাদি) সেগুলো সমাধান করার পাশাপাশি ভালো কোনো গ্রামার বই থেকে ওই বিষয়গুলো আরও বিস্তারিত পড়তে হবে। সময় থাকলে বিসিএস ও ঢাবির ইংরেজি প্রশ্ন ব্যাংকও সমাধান করা যেতে পারে। সাধারণ জ্ঞান ও ইংরেজির ভালো প্রস্তুতি একজন শিক্ষার্থীকে অনেক আত্মবিশ্বাসী করে তুলে।
সর্বপোরি এখন থেকেই নিয়মিত পড়ালেখা করতে হবে। আর প্রচুর মডেল টেস্ট দিতে হবে। এতে করে প্রশ্ন পত্রের ধরণ বুঝা যায়। আর গুরুত্বসহকারে বিগত বছরের মেডিকেল ও ডেন্টাল প্রশ্নগুলো সমাধান করা শুরু করতে হবে। এগুলো সমাধান করা ছাড়া পুরো প্রস্তুতি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
অনেকেরইতো মেডিকেলে পড়ার ইচ্ছা থাকে। কিন্তু সবাইতো আর সুযোগ পায় না। তাই আগ থেকেই একটু সতর্ক হয়ে এবং একটু কৌশলে পড়ালেখা করলে হয়ত সুযোগ হয়েও যেতে পারে। সাফল্য এমনি এমনি ধরা দেয় না। এজন্য অবশ্যই কষ্ট করতে হয়। একজন অধ্যবসায়ী ও পরিশ্রমী ছাত্রই কেবল মেডিকেলে পড়ার সুযোগ পায়।
আমার অন্যান্য লেখাসমূহ
বিদেশে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ : আন্ডারগ্র্যাজুয়েট
বিদেশে উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপ : পোষ্টগ্র্যাজুয়েট
আমাদের ইউটিউব চ্যানেল