সরকারিভাবে কাজের ভিসা নিয়ে দক্ষিণ-কোরিয়া যাবার ধাপসমূহ

EPS-TOPIK CBT দিয়ে যারা স্বল্প খরচে সরকারি ভাবে BOESL-এর মাধ্যমে আমাদের KLTC- Korean Language Training Center এর সহযোগিতায় দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চান তাদের জন্য আমার এই পোস্ট।

দক্ষিণ কোরিয়া EPS এর আওতায় বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশ হতে কর্মী নেয়। বাংলাদেশ হতে কর্মী নিয়োগের লক্ষে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ কোরিয়া সররকারের মধ্যে MoU চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির শর্তানুযায়ী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে BOESL এবং দক্ষিণ কোরিয়া সরকারের পক্ষে HRD-Korea কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া পরিচালনা করে। BOESL নূন্যতম অভিবাসন ব্যয়ে একটি নিয়ন্ত্রিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০০৮ইং সাল হতে দক্ষিণ কোরিয়ায় কর্মী প্ররণ করছে। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রথমেই বলে রাখি, EPS-TOPIK (Employment Permit System-Test Of Proficiency In Korean) একটি লম্বা সময়ের প্রক্রিয়া। EPS এর অনেকগুলো ধাপ রয়েছে। প্রতিটি ধাপেই রয়েছে অনিশ্চয়তা। প্রথম সময়ে যে নিয়ম কানুন ছিল তা বর্তমানে অনেকখানি পরিবর্তন করা হয়েছে। বর্তমানে যে নিয়ম কানুন আছে তাও ভবিষ্যতে হয়তোবা পরিবর্তন করা হবে। কিন্তু মূল শর্ত ও প্রক্রিয়াগুলো তেমনই আছে। নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে প্রতিটি ধাপ বর্ণনা করার চেষ্টা করেছি ।

১ম ধাপঃ
EPS ভিসার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো, কোরিয়ান ভাষার উপর দক্ষতা থাকা। এই ভাষা যে কোন ভাবেই শিখতে পারেন। সরকার স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ল্যাংগুয়েজ/ কোচিং সেন্টার কিংবা প্রাইভেট ইত্যাদি ভাবে। ভাষার উপর পরীক্ষা দুইভাবে হয়: (১) রিডিং পার্ট ও (২) লিসেনিং পার্ট।

২য় ধাপঃ
ভাষা শিক্ষার পর আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে সার্কুলারের। সার্কুলার BOESL-Bangladesh Overseas Employment & Services Ltd. এর মাধ্যমে বিভিন্ন পত্রিকাতে ও বোয়েসেল ওয়েবসাইটে (www.boesl.gov.bd ) পাবলিশ হবে । সার্কুলার হলে আপনাকে অনলাইনে প্রি-রেজিস্ট্রেশন (Pre-Registration) করতে হবে। অনলাইনে প্রি-রেজিস্ট্রাশন করতে হলে কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে তা স্পষ্ট করে সার্কুলারে লিখা থাকবে। তবে পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক থাকতে হবে। নাম, জন্ম তারিখ, পাসপোর্ট নাম্বার, মোবাইল নাম্বার ও পাসপোর্টের কপি (45KB -60KB) মধ্যে স্ক্যান করে eps.boesl.org.bd এর ওয়েবসাইটে প্রি-রেজিস্ট্রেশনের জন্য ডাটা ইনপুট করতে হবে (কমেন্টে একটা মডেল কপি দেওয়া হল)। রেজিস্ট্রেশন সম্পূর্ণ হলে আপনাকে একটি কনফার্মেশন কপি পাবেন। যা আপনাকে সংরক্ষণ করে রাখতে হবে।

৩য় ধাপঃ
লটারি। যদি চাহিদার চেয়ে অনেক বেশী প্রি-রেজিস্ট্রেশন হয়। তখন সমস্ত রেজিস্ট্রেশন থেকে কোটা সমপরিমান লোক কম্পিউটারাইজড লটারির মাধ্যমে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়ে থাকে। এই লটারিতে অনেকে ভাষা না জানা ব্যাক্তিরা চান্স পেয়ে যায় আবার ঠিক তেমনি ভাষার উপর ভালোভাবে পড়াশুনা করা দক্ষ ব্যাক্তিরাও বাদ পড়ে যায়। এটি সম্পূর্ণ কম্পিউটারাইজড সিলেকশন, সুতরাং এখানে দুর্নীতি করার আপনার বা অন্য কারো ক্ষমতা থাকে না।

৪র্থ ধাপঃ
আপনি লটারির মাধ্যমে সিলেকশনের পর সব ধরণের কাগজপত্র যেমন:- অরিজিনাল পাসপোর্ট, ২০০০/- টাকার পে-অর্ডারের কপি, পাসপোর্টের A4 সাইজের কালার কপি, ২কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, প্রি-রেজিস্ট্রেশনের কনফার্মেশনের কপি একত্রিত করে আপনাকে স্বশরীরে বোয়েসেল গিয়ে মূল রেজিস্ট্রেশন (Registration) করতে হবে। এই রেজিস্ট্রেশনের প্রবেশপত্র (Admit Card) সংগ্রহ করে রাখতে হবে সবকিছু ঠিক করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।

৫ম ধাপঃ
CBT (Computer Based Test) হবে। কম্পিউটারের সামনে বসে রিডিং পার্টে 20টি প্রশ্ন 5মার্ক করে ১০০মার্ক, সময় 25 মিনিট ও লিসেনিং পার্টে 20টি প্রশ্ন 25 মিনিট পরীক্ষা একসাথে দিতে হবে। পরিক্ষার শেষেই প্রাপ্ত নম্বর জানা যাবে। পরীক্ষা অপেক্ষাকৃত ভালো হলে পরবর্তী ধাপে এগুতে হবে।

৬ষ্ঠ ধাপঃ
ভাষা পরীক্ষায় পাশের পর স্কীল টেস্ট (SKILL TEST) নামে আরও একটি পরীক্ষা হবে। স্কিল টেস্ট কেমন ও কিভাবে হবে তা অভিজ্ঞ ইন্সট্রাক্টরের কাছ থেকে বা যে কোন ল্যাংগুয়েজ সেন্টার থেকে জেনে নিতে হবে। সময়ের সাথে সাথে নিয়ম পরিবর্তন হয়েছে, হয়তো আরও পরিবর্তন হবে এবং এ পরীক্ষায় বেশী মার্ক পাওয়ার জন্য মিনিমাম ১২০ঘন্টা উল্লেখ করা সার্টিফিকেট ও ছয় (৬) মাসের অভিজ্ঞতা সম্পূর্ণ ভোকেশনাল সার্টিফিকেট থাকলে অতিরিক্ত মার্ক হিসাবে যোগ হবে।

৭ম ধাপঃ
সব পরীক্ষায় পাশ করার পর PRS-Point Recruiting System -এর মাধ্যমে কোটা সমপরিমান লোক রেখে বাকিদের ডিলেট করে দেওয়া হবে। অর্থাৎ যারা পয়েন্টে এগিয়ে থাকবে তারা কোটাতে চান্স পাবে এবং বাকিরা বাদ পড়ে যাবে। সুতরাং একশোতে ৯৮ পেয়েও বাদ পরার আশাংকা রয়েছে অপরদিকে একশোতে ৬১ পেয়েও টিকে যেতে পারে।

৮ম ধাপঃ
PRS-Point Recruiting System -এ টিকে যাবার পর আপনাকে BOESL নোটিশের মাধ্যমে জানানো হবে। তারপর আপনার মেডিক্যাল চেকআপ ও অন্যান্য আরও কিছু চেকআপ করাসহ আরও কিছু টুকিটাকি কাজ করতে হবে এবং সেই রিপোর্টগুলো আবারো বোয়েসেল এ গিয়ে জমা দিতে হবে এবং জব এপ্লিকেশন ফরম নামক একটি ফর্ম অভিজ্ঞ ইন্সট্রাক্টরের কাছ থেকে বা যে কোন ল্যাংগুয়েজ সেন্টার থেকে পূরণ করে জমা দিতে হবে।

৯ম ধাপঃ
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আপনাকে রোস্টারভুক্ত করা হবে এবং আপনি ( www.eps.go.kr ) এই ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখতে পাবেন। এখানে একটা আইডি খোলার পর আপনার সব ইনফরমেশন এখানে পাওয়া যাবে। আপনার কাজ হবে কিছুদিন পর পর আইডি তে ঢুকে খোজ খবর নেওয়া। এরপর কোরিয়ান মালিকের উপর নির্ভর করবে। আপনার ছবি, বয়স, বায়োডাটা দেখে মালিক পছন্দ করার পর আপনার ভিসা ইস্যু হবে এবং HRD-Korea এর মাধ্যমে BOESL কে জানিয়ে দিবে। বোয়েসেল কর্তৃপক্ষ নোটিশ বোর্ডে দিবে এবং মোবাইলে কল করে আপনাকে জানিয়ে দিবে।

১০ম ধাপঃ
আপনাকে জানানোর পরে আপনাকে বোয়েসেল এ ৩টা পে-অর্ডারের মাধ্যমে বোয়েসেল -এর সার্ভিস চার্জ জমা করতে হবে। তারপর কোরিয়া বাংলাদেশ টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (BKTTC) তে এক সপ্তাহব্যাপী একটা ট্রেনিংদেওয়া হবে।

One thought on “সরকারিভাবে কাজের ভিসা নিয়ে দক্ষিণ-কোরিয়া যাবার ধাপসমূহ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *