ভিজ্যুয়াল প্লেজার এবং ন্যারেটিভ সিনেমাঃ নারীবাদী চলচ্চিত্র তত্ত্বের পর্যালোচনা
নারীবাদী চলচ্চিত্র তত্ত্ব বিগত কয়েক দশকে চলচ্চিত্র তত্ত্বের ওপরে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ১৯৭০-এর দশকের শেষের দিকে নারীবাদের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে নারীবাদী চলচ্চিত্র তত্ত্বটি উত্থিত হয় এবং প্রধানত ১৯৭০-এর পরে তা প্রসার লাভ করে। লরা মাল্ভের মতো তাত্ত্বিকদের বহুবিধ ভাবনায় নারীবাদী চলচ্চিত্র তত্ত্ব আরও সমৃদ্ধ হয়। যুগান্তকারী এসব ভাবনাগুলোর মধ্যে লরা মাল্ভের ‘ভিজ্যুয়াল প্লেজার ও ন্যারেটিভ সিনেমা’ প্রবন্ধটি অন্যতম।
ব্রিটিশ এই নারীবাদী চলচ্চিত্র তাত্ত্বিকের প্রবন্ধটি সর্বাধিক পরিচিত, যা ১৯৭৩ সালে রচিত হয়। প্রভাবশালী ব্রিটিশ চলচ্চিত্র তত্ত্ব জার্নালে ১৯৭৫ সালে প্রকাশ লাভের পর এটি ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসে। এই তত্ত্বটি সিগমুন্ড ফ্রয়েড ও জ্যাক লাকার তত্ত্ব দ্বারা প্রভাবিত ছিল।
লৌকিক এই প্রবন্ধটিতে লরা মাল্ভের উদ্দেশ্য ছিল পিতৃতান্ত্রিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা। প্রশ্ন হলো, নিজের যুক্তি খণ্ডনে তিনি কোন পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন? তিনি কি তার প্রয়াসে শেষ পর্যন্ত সফল হয়েছিলেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে এই পর্যালোচনায়।
সর্বপ্রথমে, ‘ভিজ্যুয়াল প্লেজার ও ন্যারেটিভ সিনেমা’ প্রবন্ধের মূল বক্তব্য সংক্ষেপে জেনে নেয়া যাক।
তিনি তার প্রবন্ধে ‘পুরুষের দৃষ্টি’ (Male Gaze) সংজ্ঞায়িত করেছেন। তিনি লেখেছেন, একটি নাটকে দর্শক পুরুষ চরিত্রের চোখ দিয়ে নারীকে দেখে। যখন নারী চরিত্র স্ক্রিনে প্রবেশ করে, দর্শক তাকে পুরুষ চরিত্রের নায়িকা হিসেবে দেখে। তার প্রবেশের ধরন, তার পোশাক আর আলোকসজ্জা এমনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় যেন সে আকাঙ্ক্ষার বস্তু। এইভাবে, দর্শক তাকে তার পুরুষ দৃষ্টি দিয়ে একটি কামনার বস্তু হিসেবে নারী চরিত্রকে উপলব্ধি করে।
বিশেষ করে জনপ্রিয় সিনেমার ভিজুয়াল আর্টে নারীদের প্রতিনিধিত্ব পরীক্ষা করার জন্য, পুরুষ দৃষ্টির আধিপত্য এইভাবে মূলধারা হলিউড চলচ্চিত্রে নারীদের ভাবমূর্তির ওপর মনোযোগ স্থাপন করে। এছাড়াও, মাল্ভে বিশ্বাস করেন যে, এই তত্ত্ব পিতৃতন্ত্র ভেঙে ফেলার জন্য সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা পিতৃতন্ত্রকে পরীক্ষা করে বিরতি নিতে পারি, যার মধ্যে মনোবিশ্লেষণ একমাত্র নয় তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তিনি পর্যবেক্ষণ করেন যে, পুরুষ চরিত্র সবসময় প্রচলিত ধারার ন্যায় সক্রিয় ও শক্তিশালী হয়। অপরদিকে, নারী চরিত্র সবসময় নিষ্ক্রিয় এবং শক্তিহীন – শুধুমাত্র পুরুষের আকাঙ্ক্ষার বস্তু।
অনেক নারীবাদী তাদের ন্যায়বিচারের জন্য একটি ভিত্তি হিসেবে সাইকোঅ্যানালাইসিস তত্ত্ব ব্যবহার করেছেন। অন্যদের মত মাল্ভেও তার স্পষ্টতার মধ্যে একটি সৌন্দর্য খুঁজে পান। অতএব, এটা পরিষ্কার যে, যারা নারীবাদীদের জন্য নিখুঁত লক্ষ্য গঠন করে, তারা লিঙ্গবৈষম্য অন্যান্য সাংস্কৃতিক মাধ্যমে প্রকাশের চেয়ে পিতৃতন্ত্রকে গভীরভাবে বুঝতে চায়।
মাল্ভের মতে, সিনেমাটিক অভিজ্ঞতার অন্যতম আনন্দ আসে তখনই, যখন দর্শক একটি অন্ধকার থিয়েটারে নিরাপত্তায় অন্যদের উপর “গুপ্তচরবৃত্তি” করে।
দ্বিতীয় আনন্দ হল নার্সিসিজম যা স্কোপোফিলিয়া/ দর্শনকালীন তুষ্টির আরেকটি দিক। এখানে মাল্ভে প্রাথমিকভাবে ঘুরে দাঁড়ায় লাকানের থিওরির দিকে। কিন্তু একচেটিয়াভাবে নয়। তিনি লাকানের “মিরর স্টেজ” এবং আখ্যান সিনেমার কনভেনশনের মধ্যে একটি উপমা আঁকেন।
এখন পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, তিনি কি তার চেষ্টায় সফল হয়েছিলেন?
আমার বিবেচনায়, সাফল্য এখানে প্রধান বিষয় নয়। তত্ত্বের প্রভাব কতখানি ছিল সেটা মুখ্য বিষয়। এটা কি ইতিবাচক এবং দীর্ঘস্থায়ী ছিল…? হ্যাঁ, ছিল। পিতৃতান্ত্রিক আধিপত্যের বিরুদ্ধে ঢালস্বরূপ এবং লিঙ্গ ভূমিকায় লরা মাল্ভের তাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গি নারী আন্দোলনের জন্য অনেক বড় ভূমিকা রেখেছিল। এটি নারীদের ধারণা পরিবর্তন করে নারীবাদী চিন্তাকে মূলধারার চলচ্চিত্রের সাথে অন্তর্ভুক্ত করে। সমসাময়িক নারীবাদী চলচ্চিত্র-সংস্কৃতি এই তত্ত্বের মাধ্যমে সৃজনশীল বৈচিত্র্যের সাথে বিকশিত হয়। তবে, নারীবাদীরা জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে পিতৃতান্ত্রিক প্রেক্ষাপটের বাইরে নারীদের নতুন ছবি তৈরি করতে সক্ষম হয়নি।
Great work Didika
Like onek true words and deep words has been used thats what makes it more fantasy.
Keep it up❤️
And we are always there as your Motivational speaker ❤️
Thanks for your insightful comment. Happy read 🙂