জার্মানিতে অপরচুনিটি কার্ড ভিসার আদ্যোপান্ত

শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরিবাকরি ইত্যাদিসহ জীবনমানের সার্বিক কারণে অনেকেই জার্মানিতে বৈধভাবে বসবাসের স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু নানান কারণে অনেকের জন্যই সেটা সম্ভব হচ্ছিল না। তবে জার্মান সরকার সম্প্রতি নতুন একটি অভিবাসন প্রোগ্রাম চালু করেছে। সেটি হচ্ছে অপরচুনিটি কার্ড ভিসা। আর বর্তমান সময়ে জার্মানির ভিসার ক্ষেত্রে সবচেয়ে আলোচিত নাম হচ্ছে অপরচুনিটি কার্ড ভিসা (Opportunity Card Visa)। আজকের এই ব্লগে আপনাদের জানাবো জার্মানিতে জব সার্চিং অপরচুনিটি কার্ড ভিসার আদ্যোপান্ত…

জার্মানিতে অপরচুনিটি কার্ড ভিসার বিষয়ে সবকিছু সবিস্তারে জানতে ব্লগটি পড়ুন শেষ পর্যন্ত… আশা করি দরকারি অনেক তথ্য জানতে পারবেন এই ব্লগপোস্ট থেকে।


জার্মানিতে অপরচুনিটি কার্ড ভিসা : আপনার সুযোগের দরজা খুলুন

এ বিষয়ে কথা বলার আগে চলুন জেনে নিই জার্মানিতে অপরচুনিটি কার্ড ভিসার বিষয়টি আসলে কী? এর সুবিধা-অসুবিধা গুলো কী কী। অপরচুনিটি কার্ড ভিসা মূলত জার্মানির চাকরির বাজারে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, যা চাকরি খুঁজতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ।

Opportunity card visa for Germany

এটি একটি বিশেষ ভিসা প্রোগ্রাম যা আপনাকে কোনো পূর্ব-নির্ধারিত চাকরির চুক্তি ছাড়াই এক বছরের জন্য জার্মানিতে এসে চাকরি খোঁজার অনুমতি দেবে। এই প্রোগ্রামটি মূলত পয়েন্ট সিস্টেমের ওপর ভিত্তি করে কাজ করে, যেখানে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত অভিজ্ঞতা, ভাষা দক্ষতা, বয়স এবং অন্যান্য বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়। তবে পয়েন্টভিত্তিক হিসেবে না গিয়েও কোনো ধরনের ভাষাদক্ষতা ছাড়াই এই অপরচুনিটি কার্ড ভিসা পাওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে আপনার পড়াশোনাটা জার্মানিতে সম্পূর্ণ স্বীকৃত হতে হবে।

জার্মানিতে অপরচুনিটি কার্ড ভিসা প্রোগ্রামের সুবিধাসমূহ

জার্মানিতে অপরচুনিটি কার্ড ভিসা প্রোগ্রামের বেশকিছু সুবিধা রয়েছে। চলুন জেনে নিই সেগুলো কী কী…

  1. চাকরি খোঁজার সময় : অপরচুনিটি কার্ড ভিসা (Opportunity Card Visa) আপনাকে এক বছরের জন্য জার্মানিতে এসে চাকরি খোঁজার সময় দেবে।
  2. শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতি : এই প্রোগ্রামটি আপনার বিদেশি (আপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বা পৃথিবীর যে-কোনো দেশের ডিগ্রি) শিক্ষাগত যোগ্যতাকে স্বীকৃতি দেবে। এ জন্য আপনাকে আনাবিন-এর মাধ্যমে আপনার অ্যাকাডেমিক সার্টিফিকেট রিকগনাইজ করিয়ে নিতে হবে।
  3. খণ্ডকালীন কাজ : আপনি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা বা মাসে ৮০ ঘণ্টা খণ্ডকালীন কাজও করতে পারবেন, যা আপনাকে অভিজ্ঞতা অর্জন এবং অর্থ উপার্জনের সুযোগ দেবে।
  4. ভাষা দক্ষতা : জার্মান ভাষা জানলে আপনার আবেদন আরও শক্তিশালী হবে। তবে, ইংরেজি ভাষার দক্ষতা থাকলেও আবেদন করা যাবে। আপনার পড়াশোনা জার্মানিতে সরাসরি স্বীকৃত হলে ভাষার দক্ষতা ছাড়াও আবেদন করা যাবে।

বাংলাদেশ থেকে কারা আবেদন করতে পারবেন?

নিম্নলিখিত যোগ্যতা থাকলে আপনি বাংলাদেশ থেকে Opportunity Card এর জন্য আবেদন করতে পারবেন :

  1. শিক্ষাগত যোগ্যতা : আপনার যদি কমপক্ষে দুই বছরের পেশাগত প্রশিক্ষণ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকে। তবে আপনার বাংলাদেশি শিক্ষাগত যোগ্যতা জার্মান যোগ্যতার সমতুল্য হতে হবে।
  2. ভাষা দক্ষতা : জার্মান ভাষা (A1) বা ইংরেজি ভাষা (B2 = IELTS = 5.5-6.5)-এর মৌলিক জ্ঞান থাকা আবশ্যক। তবে আপনার পড়াশোনা জার্মানিতে সরাসরি স্বীকৃত হলে ভাষার দক্ষতা ছাড়াও আবেদন করা যাবে।
  3. আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ : আপনি নিজে খরচ বহন করতে পারবেন এমন প্রমাণ দেখাতে হবে। তা হতে পারে ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট, খণ্ডকালীন চাকরি কিংবা স্পন্সরশিপ। এসব বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যায় আসছি শিগগিরই।

জার্মানিতে অপরচুনিটি কার্ড ভিসা আবেদনের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  1. শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং সনদপত্র : মূল সনদপত্রের ইংরেজিতে অনুবাদসহ।
  2. জীবনবৃত্তান্ত (CV) : জার্মান পদ্ধতি অনুসারে তৈরি করা। এ জন্য আপনি ইউরোপাস ফরমেট সিভি ব্যবহার করতে পারেন।
  3. কভার লেটার : কেন আপনি জার্মানিতে চাকরির সন্ধান করতে চান তার ব্যাখ্যা।
  4. ভাষা দক্ষতা প্রমাণ : যেমন টোফেল বা আইইএলটিএস সার্টিফিকেট (ইংরেজি) বা গ্যোয়েথে ইনস্টিটিউট সার্টিফিকেট (জার্মান)।
  5. আর্থিক সামর্থ্যের প্রমাণ : ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট, খণ্ডকালীন চাকরি কিংবা স্পন্সরশিপের কাগজ।

কীভাবে আবেদন করবেন?

জার্মানিতে অপরচুনিটি কার্ড ভিসা আবেদনের জন্য আপনাকে প্রথমেই সংশ্লিষ্ট অ্যাম্বাসি অর্থাৎ আপনি যে দেশে বসবাস করেন সেই দেশের জার্মান অ্যাম্বাসির ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট লিংকে গিয়ে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হবে। বাংলাদেশে বসবাসরতরা এই লিংকে গিয়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারেন।

এরপর অ্যাম্বাসি যখন আপনাকে ডকুমেন্ট সাবমিশনের ইমেইল দেবে সেখানে সব কাগজপত্র ৫ মেগাবাইটের নিচে রেখে একটিমাত্র পিডিএফ ফাইলের মাধ্যমে রিপ্লাই দেবেন। এ ক্ষেত্রে অ্যাম্বাসির ইমেইলের কোনোকিছু ডিলিট করা যাবে না, যেন অ্যাম্বাসির লোকজন রেফারেন্স হিসেবে তাঁদের পাঠানোর ইমেইলটি দেখতে পায়।

এরপর অ্যাম্বাসি আপনাকে একটি ভিসা ইন্টারভিউর তারিখ জানাবে ইমেইলে। আপনাকে ওইদিন আপনার অরিজিনাল সব কাগজপত্র নিয়ে অ্যাম্বাসিতে যেতে হবে।

তবে অ্যাম্বাসি এখন পর্যন্ত জার্মানিতে অপরচুনিটি কার্ড ভিসা আবেদনের অনলাইন পদ্ধতি চালু করে নি। তাই অফলাইন পদ্ধতিতেই আবেদন করতে হচ্ছে।

তার মানে দাঁড়াচ্ছে, লোকেশন-ভেদে আপনি আপাতত দুইভাবে আবেদন করতে পারছেন জার্মানিতে অপরচুনিটি কার্ড ভিসার জন্য।

জার্মানির Opportunity Card-এর পয়েন্ট পদ্ধতি

জার্মানির Opportunity Card এর জন্য আবেদনকারীদের পয়েন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। এই পয়েন্ট সিস্টেমটি শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত অভিজ্ঞতা, ভাষা দক্ষতা, বয়স এবং অন্যান্য বিষয়গুলো বিবেচনা করে।

পয়েন্ট বরাদ্দের বিষয়সমূহ

  1. বিদেশি পেশাদার যোগ্যতার আংশিক স্বীকৃতি বা নিয়ন্ত্রিত পেশায় প্র্যাকটিসের অনুমতি : সর্বোচ্চ ৪ পয়েন্ট
  2. পেশাগত অভিজ্ঞতা : গত ৭ বছরে অর্জিত পেশাগত অভিজ্ঞতার জন্য ৩ পয়েন্ট। গত ৫ বছরে অর্জিত পেশাগত অভিজ্ঞতার জন্য ৩ পয়েন্ট।
  3. জার্মান ভাষায় দক্ষতা (B2 লেভেল) : ৩ পয়েন্ট
  4. বয়স (১৮ থেকে ৩৪ হলে) : ২ পয়েন্ট
  5. জার্মান ভাষায় দক্ষতা (B1 লেভেল) : ২ পয়েন্ট
  6. ৪০ বছরের কম বয়সী হলে : ১ পয়েন্ট
  7. জার্মানিতে আগের অবস্থানের প্রমাণ (গত ৫ বছরের মধ্যে টানা ৬ মাস) : ১ পয়েন্ট
  8. ইংরেজি ভাষার দক্ষতা (C1 লেভেল) : ১ পয়েন্ট
  9. জার্মান ভাষায় A2 লেভেলে দক্ষতা : ১ পয়েন্ট
  10. জার্মানিতে বেশি চাহিদাসম্পন্ন পেশার হলে : ১ পয়েন্ট
  11. অপরচুনিটি কার্ডের আবেদনের যোগ স্পাউস থাকলে : ১ পয়েন্ট

অপরচুনিটি কার্ডের জন্য যোগ্য হতে হলে আপনার ন্যূনতম ৬ পয়েন্ট থাকতে হবে।

আপনার পয়েন্ট কত? জানুন অপরচুনিটি কার্ড ক্যালকুলেটর থেকে

আপনার পয়েন্ট সত্যি সত্যি কত এবং আপনি অপরচুনিটি কার্ডের জন্য যোগ্য কি-না তা বিনামূল্যে জেনে নিতে পারেন অপরচুনিটি কার্ড ক্যালকুলেটর দিয়ে। সাধারণ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মাধ্যমে আপনি জেনে নিতে পারেন আপনার পয়েন্ট কত এবং আপনি অপরচুনিটি কার্ডের জন্য যোগ্য কি-না।

অপরচুনিটি কার্ড ভিসার মেয়াদ

অপরচুনিটি কার্ডের মেয়াদ নিয়ে অনেকের মধ্যেই বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে। তবে বিষয়টি বেশ সিম্পল।

  1. মেয়াদ : অপরচুনিটি কার্ড ভিসা সাধারণত এক বছরের জন্য দেওয়া হয়।
  2. বর্ধিত মেয়াদ : একবছরের মধ্যে উপযুক্ত চাকরি (ন্যূনতম খণ্ডকালীন) খুঁজে পেলে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয়তা পূরণ করলে আরও একবছর পর্যন্ত অবস্থান বাড়ানো যাবে।

আর এই সময়ের মধ্যে আপনাকে আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী একটি পেশাদারি চাকরি খুঁজে পেতে হবে। সেই চাকরির সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নিয়ে জার্মানিতে অবস্থানরত অবস্থায় স্থানীয় ভিসা অফিসে গিয়ে আপনাকে রেসিডেন্স পারমিটের জন্য আবেদন করতে হবে। এ জন্য আপনার লাগবে ১০০ ইউরো।

জার্মানিতে অপরচুনিটি কার্ড ভিসার খরচ কত?

অপরচুনিটি কার্ড ভিসার জন্য আসলে তেমন কোনো খরচ নেই। কাগজপত্র রেডি করতে যা খরচ লাগে মূলত তা-ই। চলুন নিচের তালিকা থেকে দেখে নিই কোন্ কোন্ খাতে খরচ হতে পারে।

ক্রমখরচের খাতখরচের পরিমাণ
১. পাসপোর্ট তৈরি৫,০০০-৮,০০০ টাকা
 ২.কাগজপত্র ফটোকপি ইত্যাদি২,০০০ টাকা
 ৩.বায়োমেট্রিক ছবি২০০ টাকা
 ৪.ভিসা ফি৭৫ ইউরো (প্রায় ৯,৫০০ টাকা)
৫. সার্টিফিকেট রিকগনাইজেশন২০৮ ইউরো (প্রায় ২৬,০০০ টাকা)
 ৬.ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট (যদি লাগে)১২,৩২৪ ইউরো (প্রায় সাড়ে ১৫ লাখ টাকা) ১০০% ফেরতযোগ্য
 ৭.বিমানভাড়াপ্রায় ১ লাখ টাকা
৮. রেসিডেন্স পারমিট১০০ ইউরো (প্রায় ৯,৫০০ টাকা)
মোট খরচ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার চেয়েও কম!  (ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট ছাড়া)
জার্মানিতে অপরচুনিটি কার্ড ভিসার খরচের তালিকা

জার্মানিতে অপরচুনিটি কার্ড ভিসার প্রস্তুতি নেবেন যেভাবে

অপরচুনিটি কার্ড ভিসার জন্য বেশকিছু বিষয়ের প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। সবগুলো্ই মোটামুটি সময় সাপেক্ষ। তা্ই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।

  1. যথাযথ প্রস্তুতি : আবেদন করার আগে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার স্বীকৃতি এবং ভাষা দক্ষতা প্রমাণ নিশ্চিত করুন। প্রয়োজনীয় সনদপত্র সংগ্রহ ও অনুবাদ করুন।
  2. আবেদনের সময়সীমা এবং কোটা : এখন পর্যন্ত কোনো সময়সীমা কিংবা কোটা আরোপ করা হয় নি। তবে অদূর ভবিষ্যতে যে নির্দিষ্ট সময়সীমা এবং কোটা আরোপ করা হবে না তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারণ ক্যানাডার পয়েন্টবেজ্ড ইমিগ্রেশন সিস্টেম থেকে আমরা অন্তত তা-ই দেখি।
  3. অনলাইন পোর্টাল : অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য জার্মান কনস্যুলার সার্ভিসেস পোর্টাল ব্যবহার করুন। এই পোর্টালে আবেদন প্রক্রিয়া সংক্রান্ত সব তথ্য পাবেন।
  4. অফলাইন আবেদন : অফলাইনে আবেদন করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অবস্থিত জার্মান দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করুন।

জার্মানিতে কাজের সুযোগ এবং সুবিধাসমূহ

  1. উন্নত কর্মপরিবেশ : জার্মানিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ গ্রহণ করলে আপনি পাবেন উন্নত কর্মপরিবেশ ও উচ্চমানের জীবনযাত্রা।
  2. বৈচিত্র্যময় চাকরির সুযোগ : বিভিন্ন ক্ষেত্র যেমন তথ্যপ্রযুক্তি, প্রকৌশল, স্বাস্থ্যসেবা, এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রচুর চাকরির সুযোগ।
  3. কর্মসপ্তাহ এবং ছুটি : জার্মানিতে কর্মসপ্তাহ সাধারণত ৩৫-৪০ ঘণ্টা এবং প্রচুর ছুটি সুবিধা থাকে, যা আপনার কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে সুষমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  4. উন্নত স্বাস্থ্যসেবা : জার্মানিতে উন্নত স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা পাওয়া যায় যা কর্মীদের জন্য একটি বড় সুবিধা।
  5. ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স : জার্মানিতে ওয়ার্ক-লাইফ ব্যালেন্স একটি চমৎকার বিষয়। জীবনকে উপভোগ করার জন্য এখানে আপনি যথেষ্ট সুযোগ পাবেন।

জার্মানির জীবনযাত্রার খরচ

  1. বাসস্থান : জার্মানিতে বাসস্থানের খরচ শহরভেদে ভিন্ন হতে পারে। বড় শহরগুলোতে যেমন বার্লিন, মিউনিখ, ফ্রাঙ্কফুর্টে বাসস্থান খরচ তুলনামূলক বেশি।
  2. খাবার এবং পোশাক : সাধারণত খাদ্য ও পোশাকের খরচ ব্যক্তিভেদে নির্ভর করে। তবে আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য এখানে সবসময়ই থাকে।
  3. পরিবহন : জার্মানিতে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম উন্নত এবং ব্যয়বহুল নয়। এছাড়া, বাইসাইকেল চালানোও জনপ্রিয়।

জার্মান সংস্কৃতি এবং সামাজিক জীবন

  1. সংস্কৃতি : জার্মানিতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কার্যক্রম যেমন সঙ্গীত, নাটক, চিত্রকলা ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া, বিভিন্ন উৎসব এবং মেলা জার্মান সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
  2. ভ্রমণ : জার্মানির সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং ঐতিহাসিক স্থানগুলি ভ্রমণের জন্য আদর্শ।
  3. ভাষা : যদিও ইংরেজি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে স্থানীয় জার্মান ভাষা জানলে আপনার সামাজিক জীবন আরও সমৃদ্ধ হবে।

ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট ছাড়া অপরচুনিটি কার্ড

অনেকেই প্রশ্ন করে থাকেন, ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট ছাড়াও কি অপরচুনিটি কার্ড-এর জন্য আবেদন করা যাবে? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ করা যাবে। সেই ক্ষেত্রে অবশ্য আপনাকে কয়েকটি পথ অবলম্বন করতে হবে। সেগুলো হচ্ছে :

  • সপ্তাহে কমপক্ষে ২০ ঘণ্টার খণ্ডকালীন চাকরির অফার অথবা
  • জার্মানিতে থাকেন এমনকোনো আত্মীয় কিংবা বন্ধুস্বজনের লিখিত গ্যারান্টি (Verpflichtungserklärung) অথবা
  • ১২,৩২৪ ইউরোর সমপরিমাণ টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স। (বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য যেটি কোনোভাবেই রিকমেন্ড করা যায় না)

ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট কী এবং কীভাবে করবেন?

জার্মানিতে আসার জন্য যেহেতু ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট খুবই নিরাপদ একটি উপায়, তাই অপরচুনিটি কার্ড-এর জন্য ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট করা খুবই বুদ্ধিমানের কাজ। জার্মানিতে জনপ্রিয় মোটামুটি চারটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট সেবা দিয়ে থাকে।

ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট কী

ব্লকড অ্যাকাউন্ট বা ‘Sperrkonto‘ হচ্ছে একটি বিশেষ ধরনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যা ভিসাপ্রাপ্তির জন্য জার্মান আইন অনুসারে বিভিন্ন ক্যাটাগরির অভিবাসীর জন্য বাধ্যতামূলক। যেমন : স্কলারশিপ বা Verpflichtungserklärung না থাকলে শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক। এটি ছাড়া সাধারণত ভিসা পাওয়া সম্ভব নয়।

ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট কীভাবে করবেন?

আগেই বলেছি, জার্মানিতে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট সেবা দিয়ে থাকে অভিবাসীদের জন্য। অনেকেই এখন প্রশ্ন করবেন সেগুলো কী কী এবং কোনটা সবচেয়ে ভালো হবে? এই অনুচ্ছেদে সেইসব বিষয় নিয়েই বিস্তারিত আলোচনা করবো। জার্মানিতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট খুলে থাকে অভিবাসীদের জন্য।

জার্মানির সবচেয়ে জনপ্রিয় চারটি প্রতিষ্ঠান যেগুলো ব্লক্ড অ্যাকাউন্ট ওপেনিং সার্ভিস দিয়ে থাকে সেগুলো হলো—

জার্মানির ব্লক্ড অ্যাকাউন্টগুলোর ভালোমন্দ দিক নিয়ে আমরা এই পোস্টে বিশদ আলোচনা করেছি। সেটি পড়ে নেওয়ার অনুরোধ করছি।

অপরচুনিটি কার্ড নিয়ে জার্মানিতে কাদের আসা উচিত হবে না?

জার্মানির অপরচুনিটি কার্ড (Opportunity Card) নিয়ে যারা জার্মানিতে আসার কথা চিন্তা করছেন, তাদের জন্য কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত। নিচে কিছু দিক উল্লেখ করা হলো যেগুলি দেখে বোঝা যাবে কারা জার্মানিতে আসা উচিত হবে না :

  1. কর্মসংস্থানের অভাব : যদি আপনি এমন একজন হন যার পেশা জার্মানির বর্তমান বাজারে চাহিদা নেই, তাহলে আপনার জন্য জার্মানিতে কাজ খুঁজে পাওয়া কঠিন হতে পারে।
  2. ভাষা দক্ষতার অভাব : জার্মানিতে কাজ করার জন্য জার্মান ভাষার ভালো দক্ষতা থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার জার্মান ভাষায় দক্ষতা না থাকে, তাহলে অনেক চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হতে পারে।
  3. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা না থাকা : যদি আপনি নতুন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে না পারেন, তাহলে জার্মানিতে বসবাস ও কাজ করা আপনার জন্য চ্যালেঞ্জিং হতে পারে।
  4. কর্মসংস্থানের প্রয়োজনীয় যোগ্যতার অভাব : জার্মানিতে কিছু কিছু পেশার জন্য নির্দিষ্ট যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। যদি আপনার সেই যোগ্যতা বা প্রশিক্ষণ না থাকে, তাহলে আপনি সেই পেশাগুলিতে কাজ করতে পারবেন না।
  5. অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা : যদি আপনি অর্থনৈতিকভাবে স্থিতিশীল না হন এবং জার্মানিতে আসার পর কিছু সময়ের জন্য নিজেকে সমর্থন করার মত সঞ্চয় না থাকে, তাহলে আপনাকে আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হতে পারে।

উপরোক্ত দিকগুলি বিবেচনা করে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন জার্মানিতে আসা আপনার জন্য উপযুক্ত হবে কিনা।

উপসংহার

পরিশেষে বলতে চাই, জার্মানির নতুন এই অপরচুনিটি কার্ড প্রোগ্রামটি বাংলাদেশের চাকরি সন্ধানকারীদের জন্য এক নতুন সুযোগের দরজা খুলে দিয়েছে। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে আপনি জার্মানিতে এসে চাকরি খোঁজার সুযোগ পাবেন। এটি আপনার ক্যারিয়ারে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। সুতরাং, আপনার যোগ্যতা এবং দক্ষতার ভিত্তিতে এখনই এই কার্ডের জন্য আবেদন করুন এবং আপনার স্বপ্ন পূরণে এক ধাপ এগিয়ে যান…

পোস্টটি যদি আপনার কাছে তথ্যবহুল মনে হয়ে থাকে তাহলে সবার সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন। কোনোকিছু জানার থাকলে কমেন্ট করতে পারেন নিচের কমেন্ট বক্সে…

Subscribe For Latest Updates!

Get higher-study abroad, visa & migration-related latest updates from eGal!

Invalid email address
We promise not to spam you. You can unsubscribe at any time.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *