উইন্ড টারবাইন কী এবং কেন?

  • উইন্ড টারবাইনের ইতিহাস:

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে বিদ্যুৎ ব্যবহার ও এর সংরক্ষণ মানুষের ব্যাপক সাধিত উন্নতি হয়। ১৮৮৮ সালে চার্লস ফ্রান্সিস রুর্স (১৮৪৯-১৯২৯) বায়ুর টারবাইন দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেন। উনিশ শতকে শুরুর দিকে ডেনমার্কের পদার্থবিজ্ঞানী পল লা চউর (১৮৪৬-১৯০৮) বায়ুর ঘূর্ণনযন্ত্রের আধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। মূলত বায়ুর গতি শক্তিকে টারবাইনের মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে শক্তি উৎপাদন করা হয়। এ ক্ষেত্রে বায়ু যখন টারবাইনের ব্লেডের মধ্যে দিয়ে যায় তখন বায়ুর গতিশক্তি ঐ ব্লেডগুলোকে ঘুরায়। আর ঐ ব্লেডগুলোর সাথে রোটর সংযুক্ত থাকে যা ব্লেডগুলোর ঘূর্ণনের ফলে সক্রিয় হয়। এই রোটর জেনারেটরের সাথে সংযুক্ত থাকে, যার ঘূর্ণনের ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

  • স্থাপন করার অবস্থান বা জায়গা:

বায়ু দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এমন এলাকাকে নির্বাচন করা হয় যেখানে বাতাসের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৬ থেকে ৮ মিটার। চাহিদা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী টাওয়ার বসানো হয়। এই টাওয়ারগুলোর উচ্চতা ১০০ ফুট এর বেশি হয়। এই টাওয়ারের উপরেই থাকে টারবাইন। যা বায়ু প্রবাহের সাথে সাথে ঘুরতে থাকে। সাধারনত উৎপাদন ক্ষমতার উপর নির্ভর করে টারবাইনের সাইজ বিভিন্ন সাইজের হয়ে থাকে। ছোট পরিসরে বাসা-বাড়িতে ব্যবহারের জন্য ১০ কিলোওয়াট ক্ষমতার পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন পরিসরে বিভিন্ন ক্ষমতার জন্য প্রয়োজনীয়  ডিজাইন করা হয়।

  • বিভিন্ন অংশসমূহ: 

০১. ভিওি

০২. বৈদ্যুতিক গ্রীডের সংযোগ

০৩. টাওয়ার

০৪. উপরে উঠার সিঁড়ি

০৫. বায়ুপ্রাহের অভিমুখ নিয়ন্ত্রণ

০৬. বহিরাবরণ

০৭. জেনারেটর

০৮. বায়ুর গতিমাপক যন্ত্র

০৯. গতি নিয়ন্ত্রক

১০. গিয়ার বক্স

১১. ব্লেড

১২. রোটর হাব

  • বিভিন্ন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের হার:

চীন বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে। তারা প্রায় বছরে 168, 690 MW বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র তারা 153, 730 MW উৎপাদন করে। (২০১৬ সালের হিসেবে)। পৃথিবীতে প্রায় একষট্টির বেশি দেশ বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বাংলাদেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হয় ফেনীর সমুদ্র উপকূলীয় সোনাগাজীতে অবস্থিত মুহুরী প্রজেক্টে। ফেনীর মুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে খোয়াজের লামছি মৌজায় ছয় একর জমির উপর অবস্থিত এটি। বিদ্যুৎকেন্দ্রে অবস্থিত ৪টি ২২৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন টারবাইন দিয়ে প্রায় এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। বাযু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে ২০১২ সালে রিজেন পাওয়ারটেক প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী একটি গবেষণা করে। গবেষকরা ফেনী, কক্সবাজার, আনোয়ারা, কুয়াকাটা ও পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় বাতাসের গতি মাপেন। তারা কক্সবাজার অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে ৬ থেকে ৮ মিটার পান। যা বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের উপযোগী। ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রয়ারি কক্সবাজার জেলায় কুতুবদিয়ায় চালু হয় ১ মেগাওয়াট সম্পন্ন বায়ুচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। ২০ কিলোওয়াট ক্ষমতার ৫০ টি টারবাইন দ্বারা ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি জাতীয় গ্রীডের সাথে সংযুক্ত নয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ আশেপাশের প্রায় ৫৫০ গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। সমুদ্র সৈকতের দক্ষিনে আলী আকবরের ডেল এলাকায় বায়ু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি অবস্থিত।

বায়ুবিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সুবিধা এর খরচ কম। রক্ষনাবেক্ষণ ও ব্যবহারও সহজ। উপযুক্ত পরবেশ পেলে যে কোন স্থানে বায়ুবিদ্যুৎ স্থাপন করা সম্ভব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *