রাজনীতিকে উপজীব্য করে যেসব থ্রিলার বই এবং সিনেমা
থ্রিলার জনরার অন্যতম সাব জনরা হলো Political Thriller/ রাজনৈতিক থ্রিলার। এই টপিক নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে তারা এই লেখাটি পড়তে পারেন। এই আর্টিকেলে রাজনৈতিক থ্রিলার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনাসহ মূল বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়েছে।
Political Thriller কি?
“The basic plot is an ordinary man pulling an innocent thread which leads to a mess of corruption. The corruption should be political or governmental in nature”
The Interpreter চলচ্চিত্রটি পর্যালোচনা করার সময় এরিক লুন্ডেগার্ড নামক একজন ফ্রিল্যান্স ব্লগার Political Thriller সম্পর্কে এই সংজ্ঞাটি দেন।
Political Thriller মূলত রাজনৈতিক ক্ষমতা সংগ্রামের পটভূমির বিপরীতে সেট করা হয়। এটি সাধারণত বিভিন্ন অতিরিক্ত আইনি ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত থাকে। কাউকে রাজনৈতিক ক্ষমতা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক থ্রিলার ডিজাইন করা হয়। যখন তার বিরোধী কেউ তাকে থামানোর চেষ্টা করে, তখন তারা সেটি ব্যবহার করে।
একটি রাজনৈতিক থ্রিলার জাতীয় বা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতির সাথে জড়িত হতে পারে। রাজনৈতিক থ্রিলারের কমন থিম গুলো হল রাজনৈতিক দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ এবং যুদ্ধ। রাজনৈতিক থ্রিলার জন এফ কেনেডি হত্যা বা ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির মত সত্য তথ্যের উপর ভিত্তি করেও তৈরি হতে পারে।
সংক্ষিপ্ত পটভূমি
১৯৫০ সালের আগে, রাজনৈতিক উপাদানের সঙ্গে গুপ্তচর উপন্যাস অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে এর আগের কিছু উদাহরণ পাওয়া যায় আলেকজান্দ্রের ডুমাসে। বিশেষ করে তার The Three Musketeers উপন্যাসে। যা প্রায়ই রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল।
ঐতিহাসিক উপন্যাসেও এর উপস্থিতি পাওয়া যায়। সেই সাথে জোসেফ কনরাডের উপন্যাস দ্য সিক্রেট এজেন্ট-এর মত সাহিত্যকর্মেও এর অস্তিত্ব মেলে।
প্রকৃত রাজনৈতিক থ্রিলার কোল্ড ওয়ারের প্রারম্ভিক দিনগুলোতে বিকাশ লাভ করে।
Political Thriller কেন্দ্রিক কিছু উল্লেখযোগ্য সিনেমা
গ্রাহাম গ্রীনের দ্যা কোয়াইট আমেরিকান (১৯৫৫) প্রথম ইন্দোচীন যুদ্ধের সময় ভিয়েতনামে আমেরিকানদের জড়িত থাকার কথা বলে। রিচার্ড কনডনের The Manchurian Candidate (1962) কোরিয়ান যুদ্ধের পর এবং ম্যাককার্থিজমের দিনগুলোর পর সেট করা হয়। ফ্রেডেরিক ফরসিথের দ্যা ডে অফ দ্য জ্যাকল-এ, চার্লস ডি গলের উপর হামলা ও প্রতিরোধ এই সবকিছুই রাজনৈতিক থ্রিলার থেকে জানা যায়। রাজনৈতিক থ্রিলারের অন্যান্য লেখকদের মধ্যে রয়েছেন জেফ্রি আর্চার এবং ড্যানিয়েল সিলভা।
বেশ কিছু আলফ্রেড হিচকক চলচ্চিত্র ইতোমধ্যে রাজনৈতিক থ্রিলারের উপাদান হিসেবে বিবেচিত। The Man Who Knew Too Much এই চলচ্চিত্রটি একটি রাজনৈতিক আক্রমণ প্রতিরোধ করতে তৈরি করা হয়েছিল।
অন্যান্য রাজনৈতিক থ্রিলার কেন্দ্রিক সিনেমাগুলো হলোঃ
- Seven Days in May
- Z
- Three Days of the Condor
- V For Vendetta
- Romero
- City Hall
- Air Force One
- Snowden
- The Post.
এই সিনেমা গুলো দেখা হয়ে গেলে আপনি রাজনৈতিক থ্রিলারের উপাদান গুলো সম্পর্কে বেশ ভাল ধারণা পাবেন।
Political Thriller সম্পর্কিত বই কেন পড়বেন?
রাজনৈতিক থ্রিলার গুলো প্রায়ই এই অনুভূতি উৎসাহিত করে যে একটি নিছক ব্যক্তির কাছেও একটি বড় মাপের পার্থক্য করার ক্ষমতা থাকতে পারে এবং একজন নায়কের কাজে সুদূরপ্রসারী ফলাফল হতে পারে।
এই ধরণের থ্রিলারে থ্রিলিং অবজেক্ট গুলো একটি ব্যক্তিকে প্রায় অনন্ত বৈচিত্র্যের সাথে সংযুক্ত করে। কিন্তু পাঁচটি একক রাজনৈতিক থ্রিলারে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত। এরা হল ব্যক্তি, ‘বস’, ‘চাকরি’, ‘সিস্টেম’ এবং ‘ধারণা।
রাজনৈতিক থ্রিলারে যে সবসময় দুর্নীতি দেখানো হয় তা না। ১৯৭০ দশকের রাজনৈতিক থ্রিলার গুলোতে দুর্নীতি দেখানোর প্রবণতা ছিল না। ঐ সময় রাজনৈতিক থ্রিলার গুলো কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে একটি রক্ষণশীল ধারায় রূপ নেয় যেখানে সরকারী কর্মকর্তাদের আদর্শ ইন্টেলিজেন্স এজেন্ট দের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়।
ভাল বনাম অশুভ এই থিমের উপর ভিত্তি করে ১৯৮০ সালের দিকে কিছু এই ঘরানার রাজনৈতিক থ্রিলারে বের হয়। এই ঘরানার রাজনৈতিক থ্রিলার গুলো পড়লে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক পতন, কোল্ড ওয়ার যুদ্ধ পরবর্তী প্রভাব, ষড়যন্ত্র এবং গুপ্তচরবৃত্তি, আন্তর্জাতিক ব্ল্যাকমেইল এবং গোঁড়া বিপ্লব ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারবেন।
রাজনৈতিক থ্রিলার ভিত্তিক কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বই হলোঃ
House of Cards by Michael Dobbs.
The Manchurian Candidate, by Richard Condon.
The Ghost Writer, by Robert Harris.
Red Sparrow, by Jason Matthews.
Total Power, by Vince Flynn.
শেষ কথন
সময়ের অগ্রগতির সাথে সাথে রাজনৈতিক থ্রিলারেও পরিবর্তন এসেছে। রাজনৈতিক থ্রিলার সময়ের থেকে কিছুটা এগিয়ে গেছে বলা যায়। তবে থ্রিলিং অবজেক্ট বরাবরই রাজনৈতিক থ্রিলারের একটি অবিচ্ছেদ্য গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল, আছে এবং থাকবে।
যে বিষয়গুলিতে পরিবর্তনের প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাদেরকেই ‘থ্রিলিং অবজেক্টস’ বোঝানো হয়েছে। যার আক্ষরিক অর্থ অনুপ্রবেশ করা। রাজনৈতিক থ্রিলার বই গুলোতেও বৈশিষ্ট্যযুক্ত বস্তুর মাধ্যমে পাঠকমনে অনেকটা চাপ প্রয়োগ করেই একটি নির্দিষ্ট ধারণা অনুপ্রবেশ করানো হয়।
আশা করি, আপনি লেখাটি পড়ার মাধ্যমে নতুন কিছু তথ্য পেয়েছেন। যদি এই আর্টিকেলটি তথ্যনির্ভর মনে করে থাকেন তাহলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। গঠনমূলক সমালোচনা করতে আপনার মূল্যবান মতামত কমেন্ট বক্সে জানান। সম্পূর্ণ লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। 🙂