সেলফোনে ক্যামেরা সংযুক্তির ইতিহাস
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন ছাড়া এক মুহূর্তও কল্পনা করা যেন অসম্ভব । আমাদের জীবনের অন্যতম অংশ এ স্মার্টফোন । ১৯৭৩ সালের প্রাচীন সেলফোনের আধুনিক রূপ আজকের এ স্মার্টফোন । যুগের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত হয়েছে স্মার্টফোন । তার অন্যতম উদাহরণ স্মার্টফোনে ক্যামেরা সংযুক্তি । ক্যামেরা এবং সেলফোনের মত দুইটি ডিভাইস একীভূত করা তৎকালীন ইলেক্ট্রনিক যুগের সক্ষমতার প্রকাশ মাত্র ।
সর্বপ্রথম ১৯৯৯ সালে জাপানে বাণিজ্যিক ভাবে এ ফোন যাত্রা শুরু করে । তবে ১৯৮৫ সালেই তৎকালীন সেলফোনে ক্যামেরাকে সিঙ্গেল মাইক্রোচিপ আকারে ব্যাবহারের ধারণা প্রদান করা হয় যা বাস্তব রূপ পায় ১৯৯৯ সালের শুরুর দিকে। মার্কিন প্রফেসর এরিক ফসইয়াম ও তার দল এ উদ্ভাবনে অংশ নেয় । তাদের মূল পরিকল্পনা ছিল মেটাল অক্সাইড সেমি কনডাক্টর ও পিক্সেল সেন্সর এর সমন্বয়ে সিঙ্গেল চিপ এ ক্যামেরা প্রস্তুত করা । তখনকার সময় এমন ধারণা ছিল প্রায় অসম্ভব । সেই যুগে মুঠোফোনও ততটা উন্নত ছিল না । ১৯৯৭ সালের “দ্যা বিজনেস উইক” আর্টিকেলে ক্যামেরাফোনের সর্বপ্রথম ধারণা প্রকাশ করা হলে তা যেন বাস্তব রূপ ধারণ করে । জাপানি কোম্পানি অলম্পাস এর সাথে সাথে টেক জায়ান্ট অ্যাপেল এ ধারণা বাস্তবায়নে এগিয়ে আসে সবার আগে । তখনও ছবি তোলা সম্ভব হলেও ভিডিও রেকর্ড করা ছিল প্রায় আকাশ কুসুম কল্পনা । ১৯৯৭ সালে বিখ্যাত ক্যামেরা তৈরির প্রতিষ্ঠান কেনন সেলফোনে উপযোগী ক্যামেরার ডিজাইন করে সফলতা অর্জন করেন । বিখ্যাত ইলেক্ট্রনিক প্রতিষ্ঠান শারপ ও নিওকেরাও ক্যামেরা যুক্তের পাশাপাশি ভিডিও করার দিকে জোর প্রদান করে । ১৯৯৭ সালের ১১ই জুন ফিলিপ কান ক্যামেরাফোনে তার সদ্য জাত শিশুর ছবি তুলে ওয়্যারলেস ট্রান্সমিশন পদ্ধতি ব্যাবহার করে প্রায় ২০০০ পরিবারের সাথে তা শেয়ার করে এক অভাবনীয় প্রযুক্তির সাথে পৃথিবীকে পরিচয় করিয়ে দেন ।
অবশেষে ২০০০ সালের শুরুর দিকে বাণিজ্যিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে ক্যামেরফোন । কোরিয়ান জায়ান্ট স্যামসাঙ এর উদ্ভাবিত বিল্ট-ইন ক্যামেরা ৩৫০০০০ পিক্সেল রেজুলিউসনের ২০ টি ডিজিটাল ছবি তুলতে সক্ষম ছিল যা ছিল তৎকালীন সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্যামেরা ফোন । তবে ওজনে ভারী ও অপরিবহনযোগ্য হওয়ায় তখনও তা গ্রাহক জনপ্রিয়তা পায়নি । দামের দিক দিয়ে এই ফোন ছিল সাধারণ মানুষের সাধ্যের বাহিরে । বহু অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও জাপান ও কোরিয়া তাদের এ উদ্ভাবন অব্যাহত রাখে । ২০০৫ সালে সেল ফোনের দুনিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করে নোকিয়া । ২০০৬ সালের মধ্যেই তারা সেল ফোন বিক্রির শীর্ষে উঠে যায় । মূলত সাধ্যের মধ্যে টেকসই ফোন দ্বারাই নোকিয়া গ্রাহকদের মন জয় করে নেয় । ২০০৬ সাল থেকেই ক্যামেরা ফোন তৈরি ও বিক্রির দিকে নজর দেয় এ প্রতিষ্ঠানটি । ২০০৮ সালেই সাফল্য অর্জন করার পর ২০১০ সালের মধ্যে ক্যামেরাফোন বিক্রি করে ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এর বেশি আয় করে একক ভাবে বাজার দখলে নেয় নোকিয়া । নোকিয়া এন-৮ সর্বপ্রথম শর্টফ্লিম তৈরির সামর্থ্য নিয়ে হাজির হলে ফোনে ক্যামেরা ব্যাবহারের প্রযুক্তি চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে ।
তবে হাই রেজুলিউসন এর ক্যামেরা ফোন তৈরিতে শীর্ষে অ্যাপেল । আইফোন-৭ এ সর্বপ্রথম ডাবল লেন্স ব্যাবহার অ্যাপেলকে সবার থেকে এগিয়ে রাখে । ২০১৬ সালের শেষের দিকে আইফোন-৭ প্লাস বাজারজাত করার পর তা ব্যাপক সাড়া ফেলে । সিংগেল চিপ এ ডুয়েল লেন্স এর ব্যবহার তখনও অনেকটা অভাবনীয় । এরপরই চায়নার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কম মুল্যে হাই রেজুলিউসন ক্যামেরাফোন বাজারজাত করার প্রকল্প গ্রহণ করে । তার মধ্যে শাওমি সাড়াজাগানো সাফল্য অর্জন করে । ২০২০ সালে ক্যামেরা ছাড়া ফোন কল্পনাই অসম্ভব ।