জার্মানিতে রেসিজম বা বর্ণবৈষম্য…

অনেকসময়ই অনেকে জানতে চান, জার্মানিতে রেসিজম বা বর্ণবাদ আছে কি-না। এই প্রশ্নের জবাব আসলে এককথায় দেওয়া খুব মুশকিল। এক বাক্যে জবাব দিতে গেলে বলতে হয়, হ্যাঁ আছে। কিন্তু পরক্ষণেই হয়তো আবার প্রশ্ন আসবে, ঠিক কতটা আছে? এটার জবাব হয়তো হবে, এটা নির্ভর করে। বিষয়টা ব্যাখ্যা করা বেশ ভালোই মুশকিল।

কারণ, জীবনের কোনো না কোনোদিন কেউ রেসিজমের শিকার হয় নি কিংবা হবে না তা বলা যায় না। তবে ইন-জেনারেল যেভাবে বলা হয় যে, জার্মানরা রেসিস্ট বা জার্মানি রেসিজমে ভরপুর, বিষয়টা সেরকম না। আবারও বলছি, পৃথিবীর আর সব দেশের মতো জার্মানিতেও নানান ধরনের বৈষম্য হয়। কিন্তু যতটা সবাই বলে থাকে সেই ধরনের ভয়ংকর মাত্রায় নয়।

আবার জার্মানিতে রেসিজমের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে ব্যক্তি আমিও কোনোভাবে দায়ী কি-না সেটাও অনেকসময় আমার নিজেকে প্রশ্ন করতে হবে।

একটা উদাহরণ দিই, ধরুন, করোনা ভাইরাসের কারণে এখন জার্মানিতে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ। আর ফ্রান্সে মহানবী (সা.)-কে অবমাননার প্রতিবাদে আপনি মিছিল বের করলেন জার্মানিতে। এবং পুলিশ সেখানে বাধা দিলো কিংবা পরে বেধড়ক পিটুনিও দিলো। তখন হয়তো কেউ বলবে মুসলমানদের সঙ্গে বৈষম্য করা হলো। অন্যায় আচরণ করলো। এভাবে কেউ বললে তা বলতেই পারে। কিন্তু কোনো বিষয়ের পটভূমি না দেখে গণহারে রেসিজমের কথা বলা বোধহয় সমীচীন হবে না।

আবার ধরুন, আপনি একটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেলেন। আপনি এশিয়ান কোনো দেশের মুসলমান। নাম মোহাম্মদ আবদুল কুদ্দুস। আর আপনার কম্পিটিটর রোমানিয়ার মাক্সিম ক্যুয়েরা। তিনি খ্রিস্টান এবং ইউরোপিয়ান। তাঁর অ্যাকাডেমিক ফলাফল আপনার চেয়ে ভালো। বিষয় দাঁড়াচ্ছে, ইউরোপিয়ান হিসেবে মাক্সিমের এক ধরনের অগ্রাধিকার আছে। সেই সঙ্গে অ্যাকাডেমিক ফলাফলও ভালো। ইন্টারভিউও ভালো হয়েছে। আর ধর্মীয় গোপন একটা টানও থাকতে পারে। তাহলে চাকরিটা কার হবে? আপনারাই বলুন। এখন যদি বলেন, কুদ্দুসের নামের আগে ‘মোহাম্মদ’ থাকার কারণে তাঁর চাকরিটা হয় নি তাহলে আমার বলার আর কিছু নেই।

অন্যদিকে ধরুন, বাংলাদেশে আপনি একটা কোম্পানির মালিক। আপনি একজন বিদেশি লোককে আপনার প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নেবেন। সেখানে দুজন লোক আবেদন করেছে। একজন ভারতের হিন্দু, আরেকজন মালয়েশিয়ার মুসলমান। মালয়েশিয়ানের ফলাফল ভালো, ইংরেজিও ভালো পারে। আপনি হয়তো ভারতীয় হিন্দুকে না নিয়ে মালয়েশিয়ানকেই নেবেন। তাহলে বলুন, এখানে রেসিজমটা আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন? এখানে কি হিন্দু হওয়ার দায়েই ভারতীয়কে বাদ দিয়েছেন আপনি? না, তাই না?

জার্মানিতে কি সত্যিই রেসিজম বা বর্ণবাদ কিংবা বর্ণবৈষম্য আছে? থাকলে তা কী পরিমাণে আছে? অভিবাসী হিসেবে একজন মানুষ জার্মানিতে কী ধরনের বর্ণবাদের শিকার হয় বা হতে পারে? নিচের এই ভিডিওতে মূলত সেসব বিষয় নিয়েই কথা বলা হয়েছে। চলুন দেখে নিই ভিডিওটি। আশা করি এটি আপনাদের ভালো লাগবে।

যা-ই হোক, অনেকেই বলছেন, জার্মানিতে জার্মান না জানলে চাকরি হয় না। তো জার্মান না জানলে চাকরি না হওয়াটাও কি রেসিজম? বাংলাদেশে বাংলা না জানলে কোনো নেপালি লোককে আপনি কি আপনার প্রতিষ্ঠানে চাকরি দিতে চাইবেন? জার্মানিতে ‘মোহাম্মদ’ নাম থাকলে চাকরি পেতে সমস্যা হয় সেটার কী কোনো সঠিক পরিসংখ্যান কেউ দেখাতে পারবে? বাংলাদেশে যেমন হিন্দুরা বৈষম্যের শিকার হয়, তেমনি ভারতে মুসলমানরাও বাদ যায় না। জার্মানিতে বৈষম্য নেই, সেটা আমি এক বাক্যে ‘না’ বলে দিচ্ছি না। মনে রাখবেন, আপনাকে যুদ্ধ করেই বাঁচতে হবে। জার্মানি স্বর্গ নয়! এখানে আসার জন্য কেউ কাউকে বিমানের টিকেটও পাঠিয়ে দেয় নি। যাঁরা আসছেন তাঁরা নিজের ইচ্ছেতেই আসছেন। আপনি ভালো হলে অনেক বৈষম্য হয়তো আপনি এড়াতে পারবেন, আমি শুধু সেটা বলতে চেয়েছি। আর বৈষম্য করে আপনাকে কেউ মেরেও ফেলবে না। আপনি আপনার চেষ্টায় ঠিকই সামনে এগিয়ে যাবেন এবং এটাই জীবনের নিয়ম…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *