ক্যারিয়ার পাথওয়ে (সিরিজ ০২): কিভাবে স্টাডি চলাকালীন নিজেকে জবের জন্য প্রস্তুত করব এবং করণীয়!!
জার্মানিতে আসার পর পড়াশোনা, ভাষা এবং এখানকার সংস্কৃতি বুঝতেই আমাদের অনেক সময় পার হয়ে যায় এবং একটা সময় নিজেকে জবের জন্য যোগ্যতাসম্পন্ন মনে হয়না আর এটা আমাদের নিজেদের মাঝে কনফিডেন্সের ঘাটতির দিকে ইঙ্গিত করে। আর হওয়াটা খুব-ই নরমাল, কেননা আমরা ভাবি আমিতো খুব ভালো জার্মান পারিনা, স্টাডি রিলেটেড কাজের অভিজ্ঞতাও খুব একটা নেই। আমার কি জব আদৌ হবে? জার্মানিতে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারবো তো?
ঠিক এমনটা আমিও ভাবতাম যখন মাস্টার্সে ছিলাম। সময়টা ছিল ২০২১, আমরা ৩ বাংলাদেশি একসাথে বার্গার কিং-এ পার্ট-টাইম জব করতাম একদম জার্মান লাইফের শুরু ২০১৯ থেকেই, যদিও আমাদের আলোচনার মূলে থাকতো কিভাবে এই বার্গার কিং জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে পড়াশুনা রিলেটেড জব পেয়ে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে পারি। নরমাল দিনের মতোই সেদিনও কিচেনে কাজ করছিলাম, মানে বার্গারে মায়োনিস লাগানোর সময় একভাই হুট করে একটা কথা বলে উঠল যা অন্ধকার টানেলের শেষ প্রান্তে আলোর দেখা পাওয়ার মতো ছিল। কথা-টা কি ছিল জানেন?
#ইন্টার্নশিপ
কারণ, জার্মানিতে আপনাকে স্টাডি রিলেটেড জব পেতে হলে স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় আপনি কি কি জব এক্সপেরিয়েন্স গেইন করেছেন সেটা একটু বেশি-ই খেয়াল করা হয়। এই অভিজ্ঞতা আপনাকে জব পেতে শুধু এগিয়েই রাখবে না, বরং এক্সপেক্টটেড জব এর সাথে আপনার স্টুডেন্ট থাকা অবস্থায় যে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন সেটা মিলে গেলে আপনার জব হওয়ার সম্ভবনা ৯৯% বেড়ে যায় আর ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা আপনাকে বাড়তি সুবিধার পাশাপাশি বাকিদের থেকে অবশ্যই এগিয়ে রাখবে।
চলুন ব্যাখ্যা করা যাক:-
বাংলাদেশে ইন্টার্নশিপ: আমরা বাংলাদেশে খুব কম-ই ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ পাই আর বাংলাদেশে সীমিত কোম্পানির তুলনায় অধিক ছাত্র-ছাত্রী থাকায় আমরা ইচ্ছে স্বত্বেও আমরা এই ইন্টার্নশিপের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হই। যারা পাই তারা অল্প কয়েকদিনে হাতে-কলমে খুব একটা শেখার সুযোগ পাইনা যা আমাদের জব মার্কেটে যেতে কিছুটা গ্যাপ তৈরী করে কারণ ফ্রেশারদের জব দিতে কিছুটা গড়িমসি করে। আমার ব্যাচেলরে ইন্টার্নশিপের একটা বাধ্যতামূলক থাকায় ৭দিনের ইন্টার্নশিপ করেছিলাম একটি ফার্মা কোম্পানিতে, তাও অনেক লবিং-এর মাধ্যমে পেয়েছিলাম, কিন্তু ৭দিনে তেমন কিছু শিখতে পেরেছিলাম বা শেখা যায় বলে মনে হয়না।
জার্মানিতে ইন্টার্নশিপ: জার্মানিতে স্টুডেন্টসদের পেইড অথবা আন-পেইড ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ আছে। হোক সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রফেসরের ল্যাবে অথবা আপনার স্বপ্নের কোন রেপুটেটেড কোম্পানিতে যেখানে আপনি ১-৬ মাস বা তার চেয়েও বেশি সময় ধরে ইন্টার্নশিপ করতে পারবেন। জার্মানরা ইন্টার্নশিপ খুব-ই পছন্দ করে কেননা হাতে কলমের কাজের দিকে তারা সবসময়ই একটু বাড়তি-ই গুরুত্ব দেয়। কারণ তারা ভালো করেই জানে পড়াশোনা শেষে জব পাওয়ার জন্য ইন্টার্নশিপ এর গুরুত্ব কতটুকু, সেইজন্য তারা সেমিস্টার গ্যাপ নিয়ে জার্মানির বাহিরে, বিশেষ করে USA তে ৬ মাসের ইন্টার্নশিপ করতে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে অনেক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস দের দেশের বাহিরে ইন্টার্নিশিপ করতে উৎসাহিত করার জন্য স্কলারশিপের ও ব্যবস্থা রেখেছে। কিছু ব্যাচেলর অথবা মাস্টার্স প্রোগ্রামে ইন্টার্নশিপ বাধ্যতামূলক করে থাকে যাতে স্টুডেন্টসরা হাতে কলমে কাজ শেখার মাধ্যমে তাদের ভবিষ্যৎ জবের জন্য নিজেকে আগে থেকে প্রস্তুত করার সুযোগ টুকু পায়।
আমি মাস্টার্সে থাকাকালীন সবমিলিয়ে ৩টা ইন্টার্নশিপ করেছিলাম। ৭০টা রিজেকশনের পর প্রথম ইন্টার্নশিপ-টা পাই একটা রিসার্চ ইন্সটিটিউটে তাও মাত্র এক মাসের জন্য, যেখানে একজন পিএইচডি গবেষক আমাকে একদম হাতে কলমে ল্যাবের ব্যাসিক শিখিয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, এই ইন্টার্নশিপটা পুরোপুরি আন-পেইড ছিল। পরবর্তীতে, আমার ডিপার্টমেন্টের একজন প্রফেসরের ল্যাবে আরো একটা ২মাসের আন-পেইড ইন্টার্নশিপ করেছিলাম। সেখানে CRISPR-Cas9 থেকে শুরু করে আরো অনেক নতুন টেকনোলজি শেখার সুযোগ হয়েছিল। তবে আমার ৩য় ইন্টার্নশিপটা ছিল পেইড, যেখানে জার্মানির টপ ৫টা বাইওটেকনোলজি কোম্পানির মাঝে একটিতে ইন্টার্ন করার সুযোগ পেয়েছিলাম।
আমার মাস্টার্স থিসিস এবং পিএইচডি পাওয়ার ক্ষেত্রে এই ইন্টার্নশিপস গুলোই ছিল আমার মেইন হাতিয়ার। ওই যে প্রথম ১ মাসের ইন্টার্নশিপ-টাই ছিল আমার ক্যারিয়ার গড়ার পথের টার্নিং পয়েন্ট, যা বার্গার কিং-এ থাকা লো-কনফিডেন্স এর মানুষটাকে ধীরে ধীরে বর্তমানে মানুষের হার্ট এবং কিডনী ক্যান্সার গবেষণায় নিয়ে এসেছে যেখানে হার্ট অ্যাটাক এবং কিডনী ক্যান্সার হওয়ার প্রধান কারণগুলো প্রতিটা কোষে থাকা ইনফরমেশন বের করে নতুন আবিষ্কারের দুয়ারের কাছাকাছি আসার সুযোগটা করে দিয়েছে।
বি:দ্র: আসছে….
ক্যারিয়ার পাথওয়ে (সিরিজ ০৩): কিভাবে ইন্টার্নশিপ খুঁজে পেতে পারি?
Osman Goni
PhD Researcher
Uniklinik RWTH Aachen, Germany