‘বিদেশযাত্রা’র যাত্রা শুরু
অভিবাসনপ্রত্যাশী, বিদেশে অবস্থানরত অভিবাসী, বিদেশফেরত অভিবাসী এবং তাদের পরিবারের জন্য নিরাপদ অভিবাসন, টেকসই পুনরেকত্রীকরণ এবং রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনাসহ প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সেবা প্রদানে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) একটি অনলাইন প্ল্যাটফম তৈরি করেছে, যার নাম ‘বিদেশযাত্রা’। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত প্রত্যাশা প্রকল্পের আওতায় এই প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করা হয়।
২৬ নভেম্বর ২০২০ এক অনলাইন অনুষ্ঠানে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন এই প্ল্যাটফর্মটি উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইওএম বাংলাদেশ-এর মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরিসহ অভিবাসন খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা।
অভিবাসীরা বাংলাদেশের জন্য অন্যতম গুরত্বপূর্ণ বিনিয়োগের একটি। শুধুমাত্র ২০১৯ সালে অভিবাসীরা বাংলাদেশে রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন ১৮.৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত পাঁচ দশকে বাংলাদেশ এক কোটি ৩০ লাখ অভিবাসী শ্রমিক বিদেশে পাঠিয়েছে। সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের অভিবাসন খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘসময় ধরে কাজ করছে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর ৫ লাখের বেশি অভিবাসী শ্রমিক বিদেশ যান। নিয়মিত, বিধিসম্মত এবং নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিতের লক্ষ্যে জাতিসংঘের অভিবাসন সংস্থা আইওএম বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে অভিবাসীবান্ধব তথ্য সেবা প্রদানে আইওএম তৈরি করেছে ‘বিদেশযাত্রা’ নামক একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এবং ওয়েবসাইট (https://bdeshjaatra.com/) প্লাটফর্ম। প্ল্যাটফর্র্মটি তৈরিতে কারিগরি সহায়তা করেছে বিডিজবস।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুস সালেহীন বলেন, “অভিবাসন ব্যবস্থাপনা বাংলাদেশ সরকারের একটি অগ্রাধিকার খাত। অভিবাসী কর্মীদের নিরাপত্তা ও শোভন কর্ম-অবস্থা নিশ্চিতে আমরা কাজ করে চলেছি। জাতীয় উন্নয়নে অভিবাসী কর্মীদের অবদান আমাদের জন্য মূল্যবান। দেশের প্রত্যেক উপজেলা থেকে প্রতি বছর ১০০০ কর্মীকে বিদেশ পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। অভিবাসন প্রক্রিয়ায় শোষণ, ঋণ সংক্রান্ত জটিলতা, বৈষম্য ও নির্যাতন প্রতিরোধে নিরাপদ অভিবাসন, পুনরেকত্রীকরণ এবং রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনা বিষয়ক তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্ত নিতে অভিবাসীদের সহায়তা করতে ‘বিদেশযাত্রা’ একটি সময়োপযোগী উদ্যোগ।”
ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত র্যানচা টিয়ারিঙ্ক তার বার্তায় বলেন, “যথার্থ তথ্যনির্ভর সিদ্ধান্তই সঠিক সিদ্ধান্ত। যারা জেনেশুনে বিদেশ যান তারা অনেক বেশি নিরাপদে থাকেন। নিরাপদ অভিবাসন ও টেকসই পুনরেকত্রীকরণ নিশ্চিতে এবং উন্নত অভিবাসন ব্যবস্থাপনা সহায়তায় এই প্ল্যাটফর্মটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত প্রত্যাশা প্রকল্পের অন্যতম উদ্যোগ। আমি বিশ্বাস করি, এই অনলাইন প্ল্যাটফর্ম তথ্যের ঘাটতি কমিয়ে নিরাপদ, বিধিসম্মত এবং নিয়মিত অভিবাসন নিশ্চিতে সহায়তা করবে।”
আইওএম বাংলাদেশ-এর মিশন প্রধান গিওরগি গিগাওরি বলেন, “করোনা সংকট সারাবিশ্বের জনগোষ্ঠীর উপর বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। এই মহামারী থেকে আমরা শিখেছি যে, অন্য যেকোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে হালনাগাদকৃত সঠিক তথ্য অভিবাসীদের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বিদেশযাত্রা’র উদ্দেশ্য হচ্ছে অভিবাসী কর্মীরা যেন তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হন তা নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, গন্তব্য দেশে অভিবাসীরা কোথায় সাহায্য ও সেবা পেতে পারেন, নিজ দেশে ফেরত আসার পর কী ধরণের সহযোগিতা তারা পেতে পারেন, উন্নত রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও সহযোগিতা কোথায় পেতে পারেন- এসকল বিষয়ে তারা যেন অবহিত থাকেন তা নিশ্চিত করা এই প্ল্যাটফর্মের উদ্দেশ্য।”
অভিবাসন বিষয়ে সিদ্ধান্ত পূর্ববর্তী, গমন-পূর্ববর্তী, অভিবাসনকালীন এবং প্রত্যাবর্তনসহ অভিবাসন প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপ সংক্রান্ত সকল প্রয়োজনীয় তথ্য বাংলা ভাষায় পাওয়া যাবে ‘বিদেশযাত্রা’ প্ল্যাটফর্মে। একই তথ্য ওয়েবাসাইট ও এ্যাপে পাওয়া যাবে। ৬.১ মেগাবাইটের মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করা যাবে গুগল-প্লে স্টোর থেকে, যা অফলাইনে এবং স্বল্প ডাটা খরচ করে ব্যবহার করা যাবে।
প্ল্যাটফর্মটি তৈরি করা হয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অর্থায়নে পরিচালিত প্রত্যাশা প্রকল্পের আওতায়। বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্বে ব্র্যাকের সাথে অংশীদারিত্বে আইওএম বাংলাদেশ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।