ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি কি?

আচ্ছা, কখনো কি এই বিশাল আকাশটার দিকে তাকিয়ে মনে হয়েছে, ‘কি আছে এই আকাশটার পেছনে?’ কিংবা আমাদের এই পৃথিবীর বাহিরেই বা কি বিস্ময় লুকিয়ে আছে!? আমাদের এই গ্রহ বাদে কি আর কোনো গ্রহ আছে? নাকি আমরা একাই আছি এই মহাবিশ্বে! আচ্ছা, কখনো কি মনে বিস্ময় জেগেছে এই ভেবে যে, ‘মঙ্গলগ্রহ, জুপিটার, নেপচুন, প্লুটোর মত এতো এতো গ্রহ আসলে কোথায় আছে? আর নাসা-ইএসএ-ইস্রোর মত প্রতিষ্ঠান এসব খুঁজেই বা পাচ্ছে কিভাবে?’। ‘রাতের আকাশের ওই তারা গুলোই বা আবার কি? কি আসলে ওভাবে মিটিমিটি জ্বলে আকাশে?’ চলুন আজ উত্তর খুঁজে আসি পৃথিবীর বাহিরের দুনিয়া, ‘ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি’ থেকে…

আকাশ গঙ্গা ছায়াপথ

 

উপরে যেই ছবিটি দেখছেন, এটি ‘ছায়াপথ বা গ্যালাক্সি’ (প্রতীকী ছবি)। এর ভেতরেই আমরা বাস করছি। আমাদের এই ছায়াপথের নাম ‘মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি’ বা ‘আকাশ গঙ্গা ছায়াপথ’। অসংখ্য সৌরজগৎ মিলে তৈরি হয়ে থাকে একটি ছায়াপথ। আবার অসংখ্য গ্রহ নিয়ে তৈরি হয় একটি সৌরজগৎ। যেমন আমরা সূর্যের সৌরজগৎ বা সৌরমণ্ডলে বাস করছি। আমাদের এই সৌরজগৎ অবস্থান করছে ছায়াপথের ‘ওরিয়ন আর্ম (Orion Arm)’ এর মধ্যে। আর এই ‘ওরিয়ন আর্ম’ অবস্থান করছে ছায়াপথের ‘পার্সিউস আর্ম’ এবং ‘কারিনা-স্যাজিটেরিয়াস আর্ম’ এর মধ্যে লোকাল আর্ম হিসেবে। অনেক পেঁচিয়ে ফেললাম মনে হয়? তাই না? হা হা হা। আচ্ছা আমরা ধীরে ধীরে আগাই।

 

আমরা পৃথিবীতে বাস করছি। এই পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘুরছে। সূর্যের চারিদিকে অবশ্য শুধু পৃথিবী না, সর্বমোট ৮টি গ্রহ সূর্যের চারিদিকে পরিভ্রমণ করছে। চলুন সেগুলো একটু চিনে নেই;

 

এছাড়াও দুটি বামন গ্রহ আছে। যেগুলোকে আসলে কিছু সংস্থা পূর্ণ গ্রহ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চায় না। সেই দুটি হলো;

 

এছাড়াও প্রায় ৫৭৫ টি উপগ্রহ, ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫৪ টা অপরিণত গ্রহ, ৪ হাজার ১৪৩ টি ধূমকেতুসহ অসংখ্য উল্কাপিন্ড প্রতিনিয়ত সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। আর এগুলো নিয়েই গঠিত আমাদের এর সৌরজগৎ। যা পর পর সাজালে এমন দেখা যাবে;

 

এরকম আরও হাজার হাজার সৌরজগৎ নিয়ে গঠিত আমাদের আকাশ গঙ্গা ছায়াপথ বা Milky Way Galaxy। যেমন আমাদের নিকটবর্তী বা প্রতিবেশী সৌরজগৎ হলো ‘প্রক্সিমা সেন্টোরি (Proxima Centauri)’ এবং ‘আলফা সেন্টোরি (Alpha Centauri)’; যা আমাদের থেকে মাত্র ৪ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত।

এই উজ্জ্বল আলো দুটির একটি প্রক্সিমা এবং আরেকটি আলফা সেন্টোরি, যাদের আমরা রাতের আকাশের তারা বলে থাকি।

 

এরকম কতকগুলি সৌরজগৎ নিয়ে গঠিত হয় কিছু Local Intersteller Cloud, যা বিভিন্ন বেল্টের মাধ্যমে Local Bubble বা Local Cavity এর মধ্যে আবদ্ধ থাকে। নিচে আমাদের সৌরজগৎ যেই ইন্টার্স্টেলার ক্লাউড এবং লোকাল বাবলের মধ্যে রয়েছে, তার প্রতীকী ছবি দেওয়া হলোঃ

 

এতোক্ষন আমরা যা যা জানলাম সৌরজগৎ সম্পর্কে, তার সব নিয়েই গঠিত ছায়াপথের বিভিন্ন স্পাইরাল আর্ম (Spiral Arm)। যেমন, আমরা আছি ওরিয়ন আর্মের (Orion Arm) মধ্যে। এরকম আরও মোট ৬ টি আর্ম নিয়ে গঠিত আমাদের আকাশ গঙ্গা ছায়াপথ। তাহলে ভেবে দেখুন কি বিশাল আমাদের এই ছায়াপথ!

 

কিভাবে তৈরি হয়েছিলো ছায়াপথ?

ধারণা করা হয়ে থাকে, ‘বিং ব্যাং (Big Bang)’ এর ঠিক ৩ মিনিটের ওই মহা বিস্ফোরণে সৃষ্টি হয়েছিল  দুটি অন্যতম মৌলিক পরমাণু, হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। আস্তে আস্তে সময়ের পরিক্রমণে সৃষ্টি হয় প্রচুর পরিমাণ ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন এবং ইলেক্ট্রন প্লাজমা। সব মিলিয়ে যে বিপুল বস্তুকণার সমাবেশ ঘটেছিল, সেগুলো প্রচণ্ড গতিতে বিগব্যাং -এর কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। বলাই বাহুল্য, এই সময় এই সকল কণিকাও ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত। ক্রমে ক্রমে এগুলো শীতল হতে থাকলো এবং এদের ভিতরের আন্তঃআকর্ষণের কারণে- বস্তুপুঞ্জ কাছাকাছি চলে এসেছিল। স্থান বিশেষে দলবদ্ধ বস্তুপুঞ্জের ঘনত্বের বৃদ্ধির ফলে কোন কোন অংশে সৃষ্টি হয়েছিল অতিরিক্ত মহাকর্ষীয় আকর্ষণ। এই আকর্ষণের ফলে একটি ঘূর্ণনগতির সৃষ্টি হয়েছিল। অঞ্চল বিশেষে বস্তুপুঞ্জের আকর্ষণ ক্ষমতার তারতম্যে নিজস্ব এলাকার ব্যাপ্তি কম-বেশি ছিল। যে সকল অঞ্চলে অল্প জায়গার মধ্যে বিপুল বস্তুর সমাবেশ ঘটেছিল, সে সকল অঞ্চল বেশি দ্রুত গতিতে ঘুরতো। এই ঘূর্ণন গতির কারণে মহাকাশের মেঘগুলো একটি ঘূর্ণায়মান চাকতিতে পরিণত হয়েছিল। অন্য দিকে যে সকল অঞ্চলে পর্যাপ্ত ঘূর্ণনগতি লাভ করতে পারে নি, সে সব অঞ্চলে বস্তুপুঞ্জ ডিম্বাকৃতির পিণ্ডে পরিণত হয়েছিল। এই জাতীয় বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বস্তুপুঞ্জসমূহ বিভিন্ন আকৃতির একক দল গঠনে সক্ষম হয়েছিল এবং এই প্রক্রিয়ার ফসলই হলো মহাকাশের গ্যালাক্সি। আমাদের সৌরজগৎ এমনি একটি গ্যালাক্সি হলো- ছায়াপথ (Milky way)। ধারণা করা হয় প্রায় ১ হাজার কোটি বৎসরের দিকে আদি গ্যালাক্সিগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। আর আমাদের ছায়াপথ সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় ১৩৬০ কোটি বছর আগে।

 

১৯২৪ সালের আগে মানুষ মনে করত, আমাদের সৌরজগতের বাহিরে হয়ত আর কিছুই নেই। সে বছর বিজ্ঞানী এডউইন হাবলের আবিষ্কৃত হাবল টেলিস্কোপের মাধ্যমে মানুষ সর্বপ্রথম বহু দূরের কিছু নীহারিকা আর উজ্জ্বল তারকা সন্ধান করতে সফলতা লাভ করে। এরপরে একে একে আসতে থাকে মহাকাশ বিজ্ঞানে অকল্পনীয় পরিবর্তন! এসবেরই নতুন সংযোজন ব্যাক হোল বা কৃষ্ণ-গহ্বরের ছবি তুলতে সক্ষম হওয়া। যেখানে রয়েছে আধুনিক প্রকৌশল বিদ্যার অভাবনীয় অবদান।

 

মহাকাশ প্রযুক্তি বা Space Technology তে অবদান রাখা বিভিন্ন প্রকৌশল বিদ্যার মধ্যে তড়িৎ-যন্ত্র প্রকৌশল (Mechatronics Engineering) হলো অন্যতম! অটোম্যাটিক এবং কম্পিউটার ইলেক্ট্রো-মেকানিজম কন্ট্রোলের এর এইযুগের আধুনিক প্রকৌশল হলো এই তড়িৎ-যন্ত্র প্রকৌশল পড়াশোনা। বাংলাদেশে একদম নতুন হলেও, উন্নত বিশ্বের ইন্ডাস্ট্রিইয়াল সেক্টরের অন্যতম প্রধান ও এডভান্স প্রকৌশল পেশা হিসেবে ধরা হয়ে থাকে মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং কে। এই প্রকৌশল বিদ্যা সম্পর্কে জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন;

এছাড়াও আমার আরও লেখা পড়তে পারেন;

 

এখন থেকে উচ্চশিক্ষা বিয়ষক তথ্যাবলি প্রতি রবিবার দুপুর ১২ টায় প্রকাশিত হবে। পড়ার নিমন্ত্রণ রইলো। কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে জানার আগ্রহ থাকলে আমাদের নিচের কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। দ্রুতই আপনার বিভিন্ন প্রশ্নাবলীর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। ধন্যবাদ।

 

Signing Off

  • Jowad Md Madha

 

References:

  1. vikaspedia.in. (n.d.). vikaspedia Domains. [online] Available at: https://bn.vikaspedia.in/education/9b69bf9b69c1-9859999cd9979a8/9ac9bf99c9cd99e9be9a8-9ac9bf9ad9be997/9979cd9af9be9b29be9959cd9b89bf-9959bf [Accessed 6 Dec. 2020].
  2. Wikipedia.org. (2014). Wikipedia. [online] Available at: https://www.wikipedia.org.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *