ICCR স্কলারশিপে কিভাবে আবেদন সম্পন্ন করবেন বিস্তারিত সবকিছু
ICCR স্কলারশিপ ভারতের অন্যতম একটি সেরা ফুলফান্ড স্কলারশিপ। শুধু যাতায়াত খরচ ছাড়া টিউশন ফি,থাকা-খাওয়া, হাত খরচ সব কিছু থাকছে এটির আওতায়। যারা স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে পড়ালেখা করতে চান তাদেরই উচিত হবে এটিতে আবেদন করা।
এর আগের লেখায় ICCR স্কলারশিপ, সুযোগ সুবিধা এবং যোগ্যতা সম্পর্কে আলোচনা করেছি এই লেখায় ভারতের ICCR স্কলারশিপ কি আপনিও পেতে পারেন?
সাধারণত প্রতি বছর নভেম্বর ডিসেম্বর মাসে এটির সার্কুলার প্রকাশিত হয়। কিন্তু করোনার জন্য এবার তারিখ মে মাস পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। সার্কুলার প্রকাশিত হওয়ার পর সময় খুব কম থাকে বিধায় অনেক শিক্ষার্থী প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহে থাকার অভাবে বাদ পড়ে যায়। যেমন আগে থেকেই যদি পাসপোর্ট হাতে না থাকে তবে সার্কুলার প্রকাশনের পর অল্প সময়ের মধ্যে তা সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে পরে।
প্রতি বছরই ICCR স্কলারশিপে আবেদনকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বর্তমানে স্কলারশিপটির জন্য বেশ ভালো প্রতিযোগিতা হচ্ছে। স্কলারশিপ পাওয়া না পাওয়া বড় কথা নয়। বড় কথা হলো যোগ্যতা অুসারে সঠিত পদ্ধতিতে আবেদন করা। তাই আমাদের আজকের আলোচ্য বিষয় হলো কিভাবে সঠিক পদ্ধতিতে ICCR স্কলারশিপে আবেদন করা যায়।
আবেদন করতে হবে অনলাইনে এখানে। অনলাইনে আবেদন করতে হবে বিধায় হাতে লেখার ঝামেলা নেই। একটু সতর্ক হয়ে ফর্ম পূরণ করলেই হবে। তাই ধারাবাহিকভাবে ফর্ম পূরণ করার জন্য বিষয়াদি নিচে তুলে ধরা হলো।
১। প্রথম পৃষ্ঠায় ‘Scholarship For Bangladeshi Nationals’ এবং ‘ Bangladesh Scholarship Scheme’ এ দুটি অপশনে টিক দিতে হবে। এরপর আন্ডারগ্র্যাড, পোষ্টগ্র্যাড অথবা পিএইচডি অপশনের যেকোনো একটিতে টিক দিতে হবে।
২। পরের পেজে নিজের নাম, বাবা-মায়ের নাম, যোগাযোগের ঠিকানা, জন্মস্থান ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে।
৩। এরপরের পেজে অন্যান্য পয়েন্ট পূরণ করার সাথে সাথে Any Other Language এর ঘরে Bangla লিখবেন।
এরপরই পছন্দের বিষয় ও পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা দিতে হবে।
তিনটি পছন্দের বিষয় দিতে পারবেন। তবে প্রথমে যে সাবজেক্টটি রাখবেন সেটি পাবার সম্ভাবনাই বেশি। অর্থাৎ যদি CSE প্রথম ক্রমে EEE দ্বিতীয় ক্রমে রাখেন তবে CSE পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
একই পেজে বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকাও দিতে হবে। এখানে ইচ্ছামত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিন। এক্ষেত্রে পছন্দের ক্রমের গুরুত্ব নেই। কারণ যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিট খালি থাকবে সেখানেই ভর্তি করানো হবে। এমনকি আপনার পছন্দের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে যদি সিট খালি না থাকে তবে অন্য যে বিশ্ববিদ্যালয়ে খালি আছে সেখানে ভর্তি করানো হবে।
৪। এই পেজে কোন বোর্ড থেকে কত সালে পাস করছেন এবং রেজাল্ট কি তা জানতে চাওয়া হয়। এগুলো পূরণ করবেন এবং রেজাল্ট গ্রেডে লিখবেন। যেমন A+, A ইত্যাদি।
৫। এখানে দুইজন লোকের রেফারেন্স চাওয়া হয়। আপনি এমন দুইজন লোকের রেফারেন্স দিবেন যারা আপনাকে চেনে এবং আপনার ব্যাপারে কিছু বলতে পারে। তবে এই দুইজন লোক যদি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হন তবে সবচেয়ে ভালো হয়। না হলেও সমস্যা নেই। কারন রেফারেন্স বিষয়টা আসে তখন, যখন একটি সিটের বিপরীতে একাধিক শিক্ষার্থীর রেজাল্ট একই। তাই রেজাল্টকে সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
৬। ৬,৭ ও ৮ নম্বর পেজ একজন সরকারি ডাক্তার দিয়ে পূরণ করিয়ে নিতে হবে। ডাক্তার দেখলেই বুঝে যাবে কি কি করতে হবে। আপনাকে কিছু টেস্ট দিতে পারে। তারপর তিনি যাচাই বাছাই করে এই মর্মে স্বাক্ষর করবেন যে আপনার শরীরে কোনো রোগ নেই। যেখানে ডাক্তারের নাম থাকবে সেখানে স্বাক্ষর, সীল ও রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দিতে হবে।
৭। এই পেজ চেক লিস্ট। আপনি কি কি জমা দিচ্ছেন সেগুলোতে টিক দিয়ে যাবেন।
পরবর্তী করণীয়:
১। পুরো আবেদন ফর্মটির ছয় সেট ফটোকপি করুন।
২। এর মধ্যে একটা সেট ডাক্তারকে দিয়ে তার জন্য বরাদ্দ পাতাগুলো পূরণ করিয়ে নিন। বাকী সেটগুলোতে সাইন করিয়ে নিন। ডাক্তার যেভাবে পাতাগুলো পূরণ করেছে, আপনি ঠিক সেভাবে বাকি সেটগুলো পূরণ করবেন।
৩। যেসব কাগজপত্র লাগবে, সেগুলোর বারো সেট ফটোকপি করে সত্যায়িত করে নিন।
৪। এরপর আবেদন ফর্মের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় দেয়া ক্রমানুসারে ফটোকপিগুলো ছয়টি কপিতে দুই সেট-দুই সেট করে যোগ করে দিন।
৫। এখন ছবিগুলো যেখানে যেখানে দরকার, সেখানে সেখানে লাগিয়ে দিন।
অ্যাপ্লিকেশন ফর্মে দেখবেন ডাটা শিট নামে একটা পেজ আছে। সেখানেও একটা ছবি লাগাতে হয়।
৬। ফর্ম যখন ওরা বুঝে নেয়, তখন একটা ফোন নম্বর চায়। এমন একটা ফোন নাম্বার দিবেন যেটা সব সময় চালু থাকবে।
মোটামুটি কাজ শেষ। এরপর গুলশানে ইন্ডিয়ান অ্যাম্বেসিতে গিয়ে জমা দিয়ে আসুন ছয় সেট আপ্লিকেশন। এরপর প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের ৫০ মার্কে বেসিক গ্রামারে ইংরেজি পরিক্ষা দেওয়ার জন্য ডাকা হয়।
এরপর আপনার আর কিছুই করার নেই। স্কলারশিপ হয়ে গেলে তারাই আপনাকে ফোন করে সুসংবাদটা জানিয়ে দেবে। শুধু আর একবার অ্যাম্বেসিতে যেতে হবে কিছু কাগজ সংগ্রহের জন্য।
ভারতে বাংলাদেশি ছাত্রদের জন্য বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে যারা আপনাকে যেকোনো প্রয়োজনে সাহায্য করার জন্য আন্তরিক হয়ে থাকেন। শুধু তাদের মতো আপনিও ভারতের বুকে বাংলাদেশকে তুলে ধরবেন এই আশা করি। শুভ কামনা।